রাজনৈতিক দল আমলাদের ‘নিজেদের লোক’ মনে করে

রাজনীতি

ড. সালাহউদ্দীন এম আমিনুজ্জামান, লোকপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অনারারি অধ্যাপক। এ ছাড়া তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশীয় নীতি ও প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (এসআইপিজি) উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের প্রশাসনের হালচাল, এর সবলতা, দুর্বলতা, দলীয়করণ ইত্যাদি নিয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন।

সালাহউদ্দীন এম আমিনুজ্জামান: আমলাতন্ত্র, দলীয়করণ গণতান্ত্রিক সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাবান আমলাদের কারিগরি সহযোগিতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন সরকার তাদের উপদেষ্টা, মন্ত্রী হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সামরিক শাসন আর রাজনৈতিক আমলের তুলনাটা খুব যৌক্তিক বলে মনে করি না। সামরিক শাসকেরা তাঁদের শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনেই আমলানির্ভর ছিলেন। সে সময় অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ আমলা, বিশেষজ্ঞরাও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে প্রশাসনের ক্ষুদ্র এক অংশ কোনো কোনো ক্ষেত্রে যোগ্যতার কারণে সুবিধাভোগের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছাকাছি চলে আসে। পরবর্তীকালে আমলাদের ক্ষুদ্র এক অংশ নিজেদের সুবিধা অর্জনের জন্য ক্ষমতাসীন দল বা প্রধান বিরোধী দলের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। দলগুলোও এদের ‘আমাদের মানুষ’ হিসেবে গ্রহণ ও ব্যবহার করেছে। এখনো করছে।

সালাহউদ্দীন এম আমিনুজ্জামান: একজন দক্ষ পেশাজীবী আমলা নৈতিকভাবে ও আইনগতভাবেও দলীয়করণের প্রক্রিয়ায় পা বাড়াতে পারেন না। তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মী, দলের কর্মী নন। তবে এটা মেনে নিতে হবে যে গণতান্ত্রিক সমাজে নির্বাচিত সরকারের অনুগত হয়ে তাঁদের কাজকর্ম করতে হয়। শুধু আইনি ব্যত্যয় হলে তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁদের দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ‘দলীয়করণ ও স্বজনতোষণের’ প্রক্রিয়া কোনোভাবেই সরকারের দক্ষতা বা ইমেজ বাড়ায় না। ইদানীং আমলাতন্ত্রের ‘ইমেজ-সংকট’-এর পেছনে ‘দলীয় পরিচয়’ একটা প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ‘দলীয় সহমর্মিতা’ কিংবা ‘আনুগত্য’ না থাকলে দক্ষতা ও যোগ্যতায় পদোন্নতি হবে, তা নিশ্চিত নয়। এতে সার্বিকভাবে প্রশাসনের ‘দক্ষতা’ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে—সামগ্রিকভাবে প্রশাসনের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।