স্ট্রোক–পরবর্তী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

স্বাস্থ্য চিকিৎসা

স্ট্রোকে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে, মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু হয়। এ জন্য মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ কার্যক্ষমতা হারায়। প্রধানত দুই ধরনের স্ট্রোক রয়েছে—মস্তিষ্কের রক্ত সংরোধজনিত ও অন্তকরোটি রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক। উভয় কারণেই মস্তিষ্কের কিছু অংশ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দেড় কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। মৃত্যুর পাশাপাশি অনেক মানুষ বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকে। মৃত্যুহার বিবেচনা করলে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় কারণ হলো স্ট্রোক। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।

স্ট্রোকের পর দ্রুত চিকিৎসা ও বিভিন্ন ওষুধ রোগীর জীবন বাঁচালেও তার শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে লেগে যেতে পারে দীর্ঘদিন। এ ক্ষেত্রে শুরু করা হয় ফিজিওথেরাপি। একজন ফিজিওথেরাপিস্টের মূল লক্ষ্যই হলো স্ট্রোক–পরবর্তী সমস্যাগুলো নির্ণয় করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনা। এ জন্য দরকার সঠিক ফিজিওথেরাপি। তাই কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে অতি দ্রুত কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। জরুরি চিকিৎসা শেষে শুরু করতে হবে ফিজিওথেরাপি। মনে রাখবেন, স্ট্রোকের পর যত তাড়াতাড়ি ফিজিওথেরাপি শুরু করা যাবে, রোগীর কার্যক্ষমতা ফিরে আসার সম্ভাবনা তত বেশি। আবার ভুল ফিজিওথেরাপি রোগীর ক্ষতির কারণ হতে পারে। বর্তমানে অত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে বেশি কোলেস্টেরল বা চর্বি, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র, ধূমপান, স্থূলতা, মদ্যপান ও তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। স্ট্রোক সাধারণত ৫৫ বছর বা তার চেয়ে বয়স্ক পুরুষদের হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন অনেকটা ঝুঁকি কমায়। আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন বলছে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা, নিয়মিত ব্যায়াম, বেশি পরিমাণে শাকসবজি বা ফলমূল খাওয়া, লাল মাংস, মাখন বা ঘি না খাওয়া অথবা কম খাওয়া, খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ কমানো, রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, অতিরিক্ত ওষুধ সেবন না করা, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, দুশ্চিন্তা না করা এবং সব সময় নির্মল পরিবেশে বসবাস করলে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব।