উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা উপনির্বাচনে শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চে মুখোমুখি যোগী আদিত্যনাথ ও অখিলেশ যাদব

রাজনীতি

আগামী ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলা উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব এই নির্বাচনে নিজ নিজ জোটের নেতৃত্ব দেবেন, যা দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে এক প্রতিযোগিতামূলক শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ হয়ে উঠেছে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)-এর প্রচারাভিযানের নেতৃত্ব দেবেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। অন্যদিকে, অখিলেশ যাদব ইন্ডিয়া (INDIA) জোটের প্রচারের দায়িত্বে থাকবেন। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা এই উপনির্বাচনের জন্য নয়টি আসনে প্রার্থী দেবে না, যার ফলে বিজেপি এবং সমাজবাদী পার্টির মধ্যে কার্যত সরাসরি প্রতিযোগিতা দেখা দিচ্ছে।

এনডিএ এবং ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে এই লড়াই মূলত আদিত্যনাথের ব্যক্তিগত সম্মানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ সদ্যসমাপ্ত ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। এই ফলাফল রাজ্যের বিজেপি নেতাদের মধ্যে কিছু অসন্তোষ এবং দলীয় নেতৃত্বের কাজকর্মের ওপর প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরপরই যোগী আদিত্যনাথ উপনির্বাচনের প্রস্তুতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জুলাই মাসে নির্বাচন কমিশন যখন দশটি বিধানসভা আসনের জন্য উপনির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে, তখন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ মাঠে নেমে দলের প্রচার কার্যক্রম শুরু করেন। তবে এই দশটি আসনের মধ্যে মিলকিপুর (অযোধ্যা জেলা)-এর জন্য উপনির্বাচনের সময়সূচি এখনও ঘোষণা করা হয়নি, কারণ এই আসনের নির্বাচন মামলার বিচার চলছে লখনউতে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বেঞ্চে।

রাজনৈতিক পরিসরে, এই উপনির্বাচনের ফলাফল আদিত্যনাথ সরকারের কার্যকারিতা এবং তার জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়তার একটি বড় মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিজেপি শিবিরের একটি অংশে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দলের ফলাফল কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আদিত্যনাথের নেতৃত্বে সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

এছাড়াও, পড়ুন : RTD প্রতিরোধের বাজারের আকার 8.10% এর CAGR-এ বাড়ছে, এই প্রতিবেদনটি 2024-2030 টাইপ, বিভাজন, বৃদ্ধি এবং পূর্বাভাস দ্বারা বিশ্লেষণ কভার করে

অন্যদিকে, অখিলেশ যাদব এবং তার দল সমাজবাদী পার্টি এই উপনির্বাচনে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে দেখতে চাইছে। ইন্ডিয়া জোটের ছত্রছায়ায় যাদবের নেতৃত্বাধীন প্রচারাভিযান বিজেপি-র বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে। যাদবের জন্য এই উপনির্বাচন এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক লড়াই হয়ে উঠেছে, কারণ তিনি বিজেপি সরকারের দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করবেন।

সমাজবাদী পার্টির এই প্রচারাভিযানে অখিলেশ যাদব ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সমাবেশ এবং জনসভায় অংশ নিয়েছেন এবং সরাসরি যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে নিশানা করেছেন। তার সমালোচনার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে, বিজেপি শাসনামলে উত্তরপ্রদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতির অবনতি। সমাজবাদী পার্টি স্পষ্টভাবে এই বিষয়গুলোকেই নির্বাচনী প্রচারের মুখ্য ইস্যু হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।

অন্যদিকে, বিজেপির জন্য এই উপনির্বাচন একটি মর্যাদাপূর্ণ ব্যাপার। যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন দল ইতিমধ্যে তাদের সমর্থকদের মাঝে এই নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। বিজেপি এই উপনির্বাচনে তাদের সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সুযোগ দেখতে পাচ্ছে। বিজেপির স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্যের বিভিন্ন অংশে সমাবেশ এবং প্রচারাভিযান পরিচালনা করছেন, যেখানে যোগী আদিত্যনাথও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশের এই উপনির্বাচন আসন্ন ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উপনির্বাচনের ফলাফল যে দলগুলোর পক্ষে যাবে, সেই দলগুলো তাদের প্রচারের মোমেন্টাম হিসেবে এই জয়কে ব্যবহার করতে চাইবে। তবে, আদিত্যনাথের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দলীয় নেতৃত্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং উপনির্বাচনের ফলাফল তার নেতৃত্বের শক্তি প্রমাণ করতে পারে।

উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির পটভূমিতে এই উপনির্বাচন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আগামী মাসগুলিতে এই নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতেও একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে।