জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচন ২০২৪-এর তৃতীয় ও শেষ পর্যায়ের ভোটগ্রহণ আজ সকাল ৭টায় শুরু হয়েছে। নির্বাচনের এই চূড়ান্ত ধাপে ৪০টি আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে—জম্মু অঞ্চলে ২৪টি এবং কাশ্মীরে ১৬টি আসন রয়েছে। এই পর্যায়ের ভোটের মধ্যে দিয়ে মোট ৩৯ লক্ষেরও বেশি ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, যেখানে ৪১৫ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে।
ভোটের প্রস্তুতি:
ভোটের প্রাক্কালে, নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে যে সমস্ত কেন্দ্রগুলোতে উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনে সন্ত্রাসী হামলা এবং অস্থিরতা প্রতিরোধের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে CRPF, BSF এবং স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়। গত দুটি পর্যায়ের নির্বাচনে বিশেষ কোনো সহিংসতা ঘটেনি, কিন্তু শেষ পর্যায়ের ভোটে রাজ্যের বেশ কিছু স্পর্শকাতর ও উগ্রপন্থা-প্রবণ অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত থাকায় প্রশাসনের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ বিরাজ করছে।
প্রার্থীদের ভাগ্য:
এই পর্যায়ে ৪১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জম্মু অঞ্চলের ২৪টি আসনে বিজেপি ও কংগ্রেস দলের প্রধান লড়াই চলছে। অন্যদিকে, কাশ্মীর উপত্যকায় জম্মু ও কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (NC), পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (PDP) এবং জম্মু ও কাশ্মীর আপ (AAP)-এর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর এই প্রথম বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এবং সেই প্রেক্ষাপটে বিজেপির প্রচার বেশ জোরালো ছিল। অন্যদিকে, কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলো বিজেপির বিরোধিতায় মূলত বিশেষ মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং রাজ্যের অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবিতে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে।
ভোটারদের প্রতিক্রিয়া:
ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। জম্মু অঞ্চলের বেশ কিছু ভোটার মনে করছেন যে বিজেপি সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের ফলে এই নির্বাচনে তাদেরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, কাশ্মীর অঞ্চলের অনেক ভোটার মনে করছেন, বিজেপির নীতির বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিবাদ এই নির্বাচনে প্রতিফলিত হবে। বেশ কিছু ভোটার বিশেষ মর্যাদা ফিরে পেতে চাইছেন, যা বিজেপি সরকারের অধীনে বাতিল হয়েছিল। অন্যদিকে, তরুণ ভোটারদের মধ্যে কর্মসংস্থান ও শিক্ষার মতো ইস্যু বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া:
ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলোতে আধুনিক ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সর্বত্র ১০০% VVPAT (ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেল) ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে ভোটাররা তাঁদের ভোট সঠিকভাবে গণ্য হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে পারেন।
ভোটগ্রহণ আজ সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হবে, তবে ভোট গণনার দিন এখনও ঘোষণা করা হয়নি। জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া মানে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর স্থানীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধার, এবং সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় আইনের অধীনে রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন।
এছাড়াও, পড়ুন : লেজার ক্রিস্টাল উপকরণ বাজারের ভবিষ্যত
নির্বাচনী পরিবেশ:
গত দু’টি পর্যায়ের ভোটে উল্লেখযোগ্য কোনও অশান্তি দেখা যায়নি। তবে, বেশ কিছু সংবেদনশীল এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাশ্মীরের উগ্রপন্থা প্রভাবিত অঞ্চলে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করার জন্য পুলিশের বিশেষ দল প্রস্তুত রয়েছে। জম্মু অঞ্চলে বিজেপির প্রচার শিবিরে ভোটারদের মধ্যে বেশ উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেখানে তারা মূলত উন্নয়ন এবং জাতীয়তাবাদকে প্রচারের মূল ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছে। অন্যদিকে, কাশ্মীরে নির্বাচনকে ঘিরে অশান্তি ও শঙ্কার মেঘ এখনো কাটেনি, বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতি ও সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রচার শেষ:
নির্বাচনের তৃতীয় পর্যায়ের প্রচার ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচনী প্রচারকালীন কংগ্রেস, বিজেপি, NC, PDP-সহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জনসভার আয়োজন করেছেন। কাশ্মীরে জনসাধারণের মধ্যেও এই নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা ও প্রত্যাশা রয়েছে, বিশেষত সরকার পরিবর্তন অথবা কেন্দ্রীয় শাসনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে। জম্মুতে যদিও মূল লড়াই বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে সীমাবদ্ধ, কাশ্মীরে প্রচুর আঞ্চলিক দলও তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে।
নিরাপত্তা প্রস্তুতি:
নির্বাচনের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় সিআরপিএফ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষত কাশ্মীরের উচ্চ নিরাপত্তা বিশিষ্ট অঞ্চলে অস্থায়ী নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ভোটের দিন যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, বিশেষ করে কাশ্মীরের সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে।
ভোট গ্রহণের শেষে পরবর্তী ধাপ:
ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভোট গণনার দিন ঘোষণা করবে। জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্রভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই পুরো দেশের নজর এই নির্বাচনের ফলাফলের দিকে।