জাস্টিন ট্রুডোকে প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে: নিজ্জার ইস্যুতে

জাস্টিন ট্রুডোকে প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে: নিজ্জার ইস্যুতে

রাজনীতি

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত বছর সেপ্টেম্বরে কানাডার সংসদে ঘোষণা করেন যে তাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি হরদীপ সিংহ নিজ্জারের হত্যার সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সম্ভাব্য যোগসূত্র নিয়ে তদন্ত করছে। নিখুঁত প্রমাণ ছাড়াই এই অভিযোগ উত্থাপনের পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতিক্রিয়া:

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই অভিযোগের পর থেকে প্রকাশ্যে কিছু বললেও, ভারতীয় প্রশাসন সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা বা সরকারের কোনও কর্মকর্তার এ ধরনের কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। ভারতের পক্ষ থেকে কানাডার কাছে প্রমাণ দাবির পরেও কানাডা কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থায়, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর এমন একটি স্পর্শকাতর ইস্যুতে কোনও শক্ত প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ তোলার কারণে ভারত-কানাডা সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে।

হরদীপ সিংহ নিজ্জার:

হরদীপ সিংহ নিজ্জার ছিলেন একজন কট্টর খালিস্তানি নেতা, যার নামের সঙ্গে বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল এবং ভিন্দ্রানওয়ালে টাইগার ফোর্সের মতো উগ্রবাদী সংস্থার যোগ ছিল। ২০১৪ সালে ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করে, কারণ পাঞ্জাবের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। তার বিরুদ্ধে দশটি মামলা ছিল এবং তার কর্মকাণ্ড পাকিস্তানের আইএসআই-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল বলে জানা যায়। ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে, তিনি পাকিস্তানে আইএসআই-এর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে পাঞ্জাবে সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ এবং অর্থায়নের পরিকল্পনা করেন।

কানাডা-ভারত সম্পর্কের উত্তেজনা:

২০২৩ সালের জুন মাসে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারে শহরে নিজ্জারের হত্যাকাণ্ড ঘটে, যা কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দেয়। এরপর, কানাডার নিরাপত্তা সংস্থা নিখুঁত কোনও প্রমাণ ছাড়াই দাবি করে যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের সম্পর্ক থাকতে পারে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ভারতীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ তোলেন, যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

ভারতীয় সরকার তখনই এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে প্রমাণ উপস্থাপন করার জন্য। তবে, কানাডা এখনও পর্যন্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও শক্ত প্রমাণ দিতে পারেনি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, “এ ধরনের গুরুতর অভিযোগের পেছনে কোনও প্রমাণ ছাড়া মন্তব্য করা অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ।”

   এছাড়াও, পড়ুন : বিজনেস ওয়েব ফিল্টারিং সফটওয়্যার মার্কেট ট্রেন্ডস


ভারতের রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া:

ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রুডোর এই অভিযোগ কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে হতে পারে, যেখানে শিখ সম্প্রদায়ের ভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কানাডায় শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকেই খালিস্তানপন্থী এবং তারা দীর্ঘদিন ধরেই খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। ট্রুডোর এমন একটি মন্তব্য শিখ ভোটারদের সন্তুষ্ট করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হতে পারে।

ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলোও এই ইস্যুতে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও এই ঘটনাকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় বলে অভিহিত করেছে এবং ট্রুডোর মন্তব্যের নিন্দা করেছে। তারা আরও জানিয়েছে, “অভিযোগের কোনও ভিত্তি না থাকলে, এর ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হতে পারে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

এই ঘটনায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পশ্চিমা গণমাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই ট্রুডোর এই অভিযোগের সময়োপযোগীতা এবং প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এমন কোনও প্রমাণ ছাড়া কোনও দেশের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ তোলা কূটনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

উত্তরাধিকার:

এই ঘটনাটি ভারতের জন্য শুধু আন্তর্জাতিক মহলে নয়, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খালিস্তানি আন্দোলনের উত্থান এবং এর পিছনে বিদেশী শক্তির সমর্থন নিয়ে ভারত আগেও উদ্বিগ্ন ছিল। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বরাবরই খালিস্তানপন্থী সংগঠনগুলিকে আক্রমণাত্মকভাবে মোকাবিলা করে আসছে, বিশেষত যারা বিদেশ থেকে পরিচালিত হয়। নিখুঁত প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের অভিযোগ আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।