ভারত এবং কানাডার শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিকরা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অন্তত দু’বার বৈঠক করেছেন। বৈঠকগুলিতে মূলত কানাডায় কার্যকরী প্রো-খালিস্তানি কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে ভারতীয় পক্ষ তাদের কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে থাকা হুমকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।
এই বৈঠকগুলি, কানাডা এবং ভারতের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুসরণে হয়েছে, যা প্রথমে হিন্দুস্তান টাইমস দ্বারা প্রতিবেদন করা হয়েছিল। যদিও এই আলোচনায় ২০২৩ সালের জুন মাসে খালিস্তানি কর্মী হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে, তবে উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়া এবং কার্যকরী গ্রুপের বৈঠকগুলি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রেক্ষাপট
ভারত-কানাডা সম্পর্ক গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে কানাডার মাটিতে খালিস্তানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম নিয়ে ভারতের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত সরকার কানাডা সরকারের কাছে বারবার অনুরোধ করেছে যাতে খালিস্তানপন্থীদের কার্যক্রম রোধ করা হয়, যারা ভারতীয় কূটনীতিকদের ওপর হুমকি তৈরি করছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সূত্রের দাবি অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বৈঠকগুলি কানাডায় ভারতীয় কূটনীতিকদের সুরক্ষা এবং তাদের ওপর হুমকি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কানাডার সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে, যাতে এই ধরণের হুমকির মুখে ভারতীয় প্রতিনিধিরা আরও সুরক্ষিত থাকতে পারেন।
খালিস্তানপন্থী কার্যকলাপ
কানাডার মাটিতে খালিস্তানপন্থী কার্যকলাপ দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-কানাডা সম্পর্কের এক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ভারত সরকার খালিস্তানি সমর্থকদের বিরুদ্ধে বারংবার অভিযোগ করে আসছে, যারা ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গার পর থেকে ভারতের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। ভারতীয় সরকারের দাবি, কানাডার বেশ কিছু সংগঠন এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, এবং তারা ভারতীয় প্রতিনিধিদের লক্ষ্যবস্তু করতে চাইছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে বিশেষ করে খালিস্তান ইস্যুকে কেন্দ্র করে। কানাডার মাটিতে খালিস্তানপন্থীদের আন্দোলনের কারণে ভারতীয় প্রতিনিধি এবং ভারতীয় জনগণের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। কানাডার সরকারের পক্ষ থেকে খালিস্তানপন্থী কার্যকলাপ রোধে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করার কথা বলা হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ এখনও কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও, পড়ুন : নবজাতক আক্রমণাত্মক ভেন্টিলেটর বাজারের ভবিষ্যত
হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যা
২০২৩ সালের জুন মাসে খালিস্তানি আন্দোলনের কর্মী হরদীপ সিং নিজ্জারকে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ড কানাডা এবং ভারত উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে। নিজ্জারের হত্যার পর কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, এবং কানাডার মাটিতে ভারত-বিরোধী কার্যক্রম আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কানাডার শিখ সম্প্রদায় এবং খালিস্তানপন্থীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নিজ্জারের মৃত্যুর পর কানাডার সরকার এবং শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। কানাডার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত করলেও এখনও পর্যন্ত এর নির্দিষ্ট কোনও সমাধান পাওয়া যায়নি।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও আলোচনা
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে কানাডা ও ভারতের কূটনীতিকদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলি মূলত খালিস্তানপন্থী কার্যকলাপ এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের সুরক্ষা নিয়ে ছিল। ভারত সরকার কানাডার সরকারের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, কানাডার মাটিতে এই ধরণের কার্যকলাপ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। উভয় পক্ষের কূটনীতিকরা এই বৈঠকগুলির মাধ্যমে সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার এবং পূর্বের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
এই আলোচনা শুধু খালিস্তানপন্থীদের কার্যকলাপ নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি। উভয় দেশের প্রতিনিধিরা দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্যিক বিনিময় এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়।
ভবিষ্যৎ কার্যক্রম
বর্তমান আলোচনার ফলে কানাডা এবং ভারতের মধ্যে বিভিন্ন কার্যকরী গ্রুপের বৈঠকগুলি পুনরায় শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই কার্যকরী গ্রুপগুলি প্রধানত নিরাপত্তা, বাণিজ্য, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করবে। উভয় পক্ষের শীর্ষ কূটনীতিকরা এই বৈঠকগুলির মাধ্যমে সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি স্থাপনের জন্য একটি কার্যকরী রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত-কানাডা সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই আলোচনা এবং বৈঠকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রয়োজন, যা বর্তমান আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে, যখন কানাডা এবং ভারত উভয় দেশই তাদের সম্পর্ককে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং কূটনৈতিক বৈঠকগুলি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।