"যখন সন্ত্রাসবাদীরা হিন্দু সৈন্যদের হত্যা করে…": মেহবুবা মুফতির নাসরাল্লাহ সংহতি নিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মার মন্তব্য

“যখন সন্ত্রাসবাদীরা হিন্দু সৈন্যদের হত্যা করে…”: মেহবুবা মুফতির নাসরাল্লাহ সংহতি নিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মার মন্তব্য

রাজনীতি

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রবিবার পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) প্রধান মেহবুবা মুফতিকে তীব্র সমালোচনা করেছেন। মুফতি হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর প্রতি “সংহতি” প্রকাশ করেছিলেন, যিনি বৈরুতে একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

হরিয়ানার সোনিপতে একটি নির্বাচনী সভায় শর্মা বলেন, “এখন ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহ কমান্ডার হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করেছে। এটা তাদের দেশের ব্যাপার। কিন্তু আজ কাশ্মীরে মেহবুবা মুফতি বলছেন যে তিনি প্রচার করবেন না কারণ তিনি দুঃখিত যে হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন।”

শর্মা আরও বলেন, “আমি মেহবুবা, ফারুক আবদুল্লাহ এবং রাহুল গান্ধীকে জিজ্ঞাসা করতে চাই: যখন সন্ত্রাসবাদীরা হিন্দু সৈন্যদের হত্যা করে, তখন আপনারা দুঃখিত হন কি না?”

মেহবুবা মুফতির সিদ্ধান্ত

জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি রবিবার তার নির্বাচনী প্রচার বাতিল করেছিলেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ লিখেছিলেন, “লেবানন ও গাজার শহীদদের প্রতি সংহতি জানাতে, বিশেষ করে হাসান নাসরাল্লাহর প্রতি, আমি আগামীকালের প্রচার বাতিল করছি। এই অসীম দুঃখ ও অসাধারণ প্রতিরোধের মুহূর্তে আমরা প্যালেস্টাইন ও লেবাননের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি।”

বিজেপির প্রতিক্রিয়া

বিজেপি মুফতির এই ভঙ্গির তীব্র সমালোচনা করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী কবিন্দর গুপ্ত বলেন, “হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুতে মেহবুবা মুফতি কেন ব্যথিত? যখন বাংলাদেশে হিন্দুদের আক্রমণ করা হয় এবং হত্যা করা হয়, তখন তারা চুপ থাকে। আজ, যখন হিজবুল্লাহর কমান্ডার নিহত হন, তখন তারা একদিনের জন্য প্রচার বাতিল করেন।”

গুপ্ত আরও যোগ করেন, “এগুলো কুমীরের কান্না এবং জনগণ এর পিছনের উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। এই ধরনের ষড়যন্ত্র কোনো ফল দেবে না; আমাদের মানবতার দিক থেকে কথা বলা উচিত।”

এছাড়াও, পড়ুন : গ্লোবাল কার প্রোটেকটিভ কভার মার্কেট সাইজ 2024 সাল পর্যন্ত 14% এর CAGR অনুভব করবে বলে আশা করা হচ্ছে


পটভূমি: ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনা ঘটেছে। হিজবুল্লাহ একটি লেবাননভিত্তিক শিয়া মুসলিম সংগঠন, যা ইরানের সমর্থনপুষ্ট। সংগঠনটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাসী।

হাসান নাসরাল্লাহ ১৯৯২ সাল থেকে হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংগঠনের সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশল পরিচালনা করতেন।

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে হিজবুল্লাহকে একটি হুমকি হিসেবে দেখে আসছে এবং সংগঠনটির নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন অভিযান চালিয়েছে। নাসরাল্লাহর মৃত্যু হিজবুল্লাহর জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতীয় রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়া

মেহবুবা মুফতির মন্তব্য ভারতীয় রাজনীতিতে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিজেপি ও অন্যান্য দক্ষিণপন্থী দলগুলো এটিকে দেশবিরোধী বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে, কিছু বিরোধী দল মনে করছে যে এটি অভিব্যক্তির স্বাধীনতার অংশ।

হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মন্তব্য এই বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে। তিনি মেহবুবা মুফতি, ফারুক আবদুল্লাহ এবং রাহুল গান্ধীর মতো বিরোধী নেতাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি

জম্মু ও কাশ্মীরে আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ঘটনা ঘটেছে। ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে অঞ্চলটিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির রয়েছে। মেহবুবা মুফতির পিডিপি, ফারুক আবদুল্লাহর ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং অন্যান্য স্থানীয় দলগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে।

অন্যদিকে, বিজেপি জম্মু ও কাশ্মীরে তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতি বাড়াতে চেষ্টা করছে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মতো নেতাদের মন্তব্য এই প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।

মেহবুবা মুফতির মন্তব্য এবং হিমন্ত বিশ্ব শর্মার প্রতিক্রিয়া ভারতীয় রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম এবং বৈদেশিক নীতি নিয়ে চলমান বিতর্কের একটি নতুন অধ্যায় খুলেছে। আগামী দিনগুলোতে এই বিষয়ে আরও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।