কেরালা এক ব্যক্তি মিউরিন টাইফাসে আক্রান্ত: এই বিরল ব্যাকটেরিয়াল রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

কেরালা এক ব্যক্তি মিউরিন টাইফাসে আক্রান্ত: এই বিরল ব্যাকটেরিয়াল রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

স্বাস্থ্য চিকিৎসা

কেরালা রাজ্যে এক ৭৫ বছর বয়সী ব্যক্তি মিউরিন টাইফাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যা ভারতে এক বিরল ব্যাকটেরিয়াল রোগ হিসেবে পরিচিত। গত ১১ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে তাকে এই রোগে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। মিউরিন টাইফাস, যা এন্ডেমিক টাইফাস বা ফ্লি-বর্ন টাইফাস নামেও পরিচিত, মূলত ইঁদুর ও ফ্লি দ্বারা সংক্রমিত হয়।

রোগ সংক্রমণ এবং শনাক্তকরণ

রোগটি সংক্রমিত হয় Rickettsia typhi নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে, যা সাধারণত ইঁদুর বা ফ্লির মধ্যে বাস করে। ফ্লি দ্বারা সংক্রমিত হলে যখন তারা একজন মানুষকে কামড়ায়, তখন এই ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ ঘটায়। কেরালার এই ব্যক্তির সাম্প্রতিক সময়ে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া ভ্রমণ করার ইতিহাস রয়েছে। তিনি দেশে ফেরার পর গুরুতর শরীর ব্যথা এবং ক্লান্তি অনুভব করতে শুরু করেন। এই লক্ষণগুলোর কারণে তিনি চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন।

চিকিৎসকরা প্রথমে তাকে ইঁদুর বা ফ্লি-বাহিত রোগের জন্য পরীক্ষা করতে নির্দেশ দেন। যদিও প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল স্পষ্ট ছিল না, তবে তার যকৃত ও কিডনির কার্যকারিতা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছিল। The Indian Express-এর প্রতিবেদনে জানা যায় যে, রোগীর শরীরে এই লক্ষণগুলো দেখে চিকিৎসকরা সন্দেহ করেন যে তিনি মিউরিন টাইফাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি কেরালায় এই রোগের প্রথম শনাক্তকৃত ঘটনা হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

মিউরিন টাইফাস শনাক্তের প্রযুক্তি

এনজিএস (নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং) প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগীর শরীরে মিউরিন টাইফাস শনাক্ত করা হয়। এই প্রযুক্তি মাইক্রোবিয়াল ডিএনএ ব্যবহার করে রোগ নির্ধারণ করে। রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণের পর, চূড়ান্ত নিশ্চিতকরণের জন্য ভেলোরের খ্রিস্টান মেডিকেল কলেজে (CMC Vellore) অতিরিক্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।

মিউরিন টাইফাসের লক্ষণ

মিউরিন টাইফাসের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, পেশি ও শরীরব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, এবং শরীরে ফুসকুড়ি। রোগটি কখনো কখনো মৃদু লক্ষণসহ শুরু হলেও, সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে এর জটিলতা বাড়তে পারে। রোগটি প্রধানত ফ্লি এবং ইঁদুর দ্বারা সংক্রমিত হওয়ায় যেসব স্থানে এসব প্রাণীর আনাগোনা বেশি, সেসব এলাকায় রোগটির প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

মিউরিন টাইফাসের চিকিৎসায় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে ডক্সিসাইক্লিন ও টেট্রাসাইক্লিন শ্রেণীর অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পাওয়া গেলে, রোগটি সহজেই নিরাময়যোগ্য। তবে, সময়মতো চিকিৎসা না হলে রোগটি গুরুতর আকার নিতে পারে এবং বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন যকৃত এবং কিডনি।

এই রোগ প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ইঁদুর ও ফ্লির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে ইঁদুর এবং ফ্লি বেশি আছে এমন জায়গায় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ফ্লি এবং ইঁদুরের আনাগোনা বেশি, সেখানে ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পোকামাকড় প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ভ্রমণ এবং রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি

কেরালার এই রোগী সম্প্রতি ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়া ভ্রমণ করেছেন, এবং ফিরে আসার পরই এই রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এই ধরনের ভ্রমণকালে সংক্রমিত এলাকাগুলোতে ইঁদুর এবং ফ্লি থেকে দূরে থাকার জন্য পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এছাড়াও, যারা বিদেশ ভ্রমণ করে থাকেন, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে, তাদের ফিরে আসার পর যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

এছাড়াও, পড়ুন : গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনক্লিনেশন সেন্সর বাজারের আকার 2023 সালে USD 2.50 বিলিয়ন ছিল, এই প্রতিবেদনটি বাজারের বৃদ্ধি, প্রবণতা, সুযোগ এবং পূর্বাভাস 2024-2030 কভার করে

ভারতে মিউরিন টাইফাসের প্রাদুর্ভাব

ভারতে মিউরিন টাইফাস খুব কমই দেখা যায়। এটি একটি বিরল রোগ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি মাঝে মাঝে প্রাদুর্ভাব ঘটায়, বিশেষত যেখানে ইঁদুর এবং ফ্লির সংখ্যা বেশি। ভ্রমণকারী বা বিশেষ কিছু পেশার মানুষ, যেমন কৃষক বা ইঁদুর সংক্রমিত এলাকায় কাজ করা মানুষ, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কেরালার এই রোগীই প্রথম যিনি এই এলাকায় মিউরিন টাইফাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন বলে রিপোর্ট করা হয়েছে। তবে, যথাযথ সতর্কতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব।

চিকিৎসকদের পরামর্শ

চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, যেকোনো সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে যদি কারও সাম্প্রতিক ভ্রমণ ইতিহাস থাকে এবং সে সময় ইঁদুর বা ফ্লির সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে দ্রুত পরীক্ষা করানো উচিত।