বেঙ্গালুরু (কর্ণাটক) [ভারত], ২৪ সেপ্টেম্বর (এএনআই): কর্ণাটক সরকারের একটি সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যেখানে অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষক নিয়োগে উর্দু ভাষার বাধ্যতামূলক যোগ্যতা আরোপ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংসদ সদস্য টেজস্বী সূর্য কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে চিঠি লিখে এই আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
চিঠির মূল বক্তব্য:
টেজস্বী সূর্য মঙ্গলবার ‘এক্স’ (পূর্বে টুইটার নামে পরিচিত) সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তার চিঠির একটি অনুলিপি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, “কংগ্রেস কর্ণাটকে তিপু সুলতান ও হায়দার আলির ফারমানের মতো আদেশ জারি করে উর্দু ভাষাকে অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষকদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে। আমি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে চিঠি লিখে এই আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি এবং কর্ণাটকের অগ্রগতির জন্য কন্নড় ভাষা ও তার সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।”
ঘটনার পটভূমি:
কর্ণাটকের মুদিগেরে এবং চিক্কামাগালুরু জেলায় অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষকের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে উর্দু ভাষার জ্ঞানকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে টেজস্বী সূর্য তার চিঠিতে লিখেছেন, “এটি নিন্দনীয় যে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষকের নিয়োগের ক্ষেত্রে উর্দু ভাষার যোগ্যতা আরোপ করেছে। এটি কংগ্রেসের তোষণের রাজনীতির একটি উদাহরণ। কর্ণাটকে কন্নড় ভাষা সর্বোচ্চ মর্যাদায় রয়েছে, কিন্তু কংগ্রেসের এমন সিদ্ধান্ত কন্নড় ভাষার অস্তিত্বের উপর বড় আঘাত হানবে।”
টেজস্বী সূর্যের দাবি:
চিঠিতে টেজস্বী সূর্য এই সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, “আমি অনুরোধ করছি, এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হোক এবং যারা কন্নড় ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
কংগ্রেস সরকারের প্রতিক্রিয়া:
এই ঘটনার পর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি আসন্ন কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভাষা এবং সংস্কৃতি নিয়ে একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
রাজনৈতিক পটভূমি:
কর্ণাটকে ভাষা ও সংস্কৃতি সবসময়ই একটি সংবেদনশীল বিষয়। কন্নড় ভাষা কর্ণাটকের প্রধান ভাষা এবং কন্নড় সংস্কৃতি রাজ্যের মানুষের গর্বের বিষয়। টেজস্বী সূর্যের মতো নেতারা মনে করেন যে উর্দু ভাষাকে অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষকের জন্য বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত কন্নড় ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অবমাননার সামিল এবং এর ফলে কন্নড় ভাষার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে।
অপমানিত ও অসম্মানিত অনুভূতি:
টেজস্বী সূর্য চিঠিতে আরও উল্লেখ করেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত কন্নড় ভাষাভাষীদের মধ্যে অপমানিত এবং অসম্মানিত বোধ তৈরি করবে। তিনি বলেছেন, “কংগ্রেসের এমন সিদ্ধান্ত সাধারণ কন্নড় ভাষাভাষীদের কাছে অবমাননার বার্তা দেয়। এই ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী আন্দোলনের প্রয়োজন রয়েছে।”
রাজনৈতিক ফলাফল:
বিজেপি নেতা টেজস্বী সূর্যের এই পদক্ষেপে কর্ণাটকের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের বেশ কয়েকটি ভাষা ভিত্তিক সংগঠন এবং কন্নড় ভাষার সমর্থকেরা টেজস্বী সূর্যের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন। তারা কন্নড় ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সরকারের কাছ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ:
এই ঘটনার পর কর্ণাটক সরকার কী পদক্ষেপ নেবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার প্রশাসন এই বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া জানায় এবং কন্নড় ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অঙ্গীকার কতটা বজায় থাকে তা দেখার জন্য সবার নজর এখন সরকারের ওপর রয়েছে।
এই ঘটনাটি কর্ণাটক রাজ্যে ভাষা ভিত্তিক রাজনীতির একটি উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। কন্নড় ভাষা এবং সংস্কৃতি কর্ণাটকের মানুষের গর্বের বিষয়, এবং এর সুরক্ষায় রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।