হরিয়ানায় বিজেপির হ্যাটট্রিক: নির্বাচনী কৌশল এবং সাংগঠনিক শক্তির জয়

হরিয়ানায় বিজেপির হ্যাটট্রিক: নির্বাচনী কৌশল এবং সাংগঠনিক শক্তির জয়

মতামত

হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হ্যাটট্রিক জয়ের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা উঠে এসেছে: আদর্শিক অবস্থানই সব নয়, কৌশলগত বিচক্ষণতা ও সাংগঠনিক শক্তিই মূল চাবিকাঠি।

বিজেপি-র হরিয়ানা প্রচারের প্রধান নেতাদের অন্যতম, সতীশ পুনিয়া বলেছেন, “কংগ্রেস ৪০০ মিটারের দৌড়কে ১০০ মিটার দৌড়ের মতো করে দৌড়িয়েছে। কংগ্রেস হয়ত ভেবেছিল যে তাদের বেশি ভারি নেতা রয়েছে, কিন্তু আমাদের কর্মীরা অনেক ভালো।” পুনিয়ার মতে, কংগ্রেসের তুলনায় বিজেপি অনেক বেশি সংগঠিত এবং দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে, যার কারণে তারা এই জয় অর্জন করতে পেরেছে।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর রাজনীতি যে অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছে তা স্পষ্ট। বিশ্লেষকরা বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে দলে দুর্বলতা খুঁজে পেলেও, হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সেই তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করেছে। কংগ্রেসের ভোট ভাগে উল্লেখযোগ্য ১১% বৃদ্ধির পরেও বিজেপির সংগঠিত প্রচেষ্টা এবং শক্তিশালী কৌশলগত দিকগুলি তাদের আবারও ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

বিজেপি এবং আরএসএসের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন

বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর মধ্যে সম্পর্কের কিছুটা টানাপোড়েন ছিল, তবে হরিয়ানার এই বিজয় প্রমাণ করে যে তাদের লক্ষ্য অভিন্ন এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই তাদের জয় এনে দিয়েছে। প্রচারণার সময় আরএসএস কর্মীদের সম্পূর্ণ সমর্থন বিজেপিকে আরও শক্তিশালী করেছে।

আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের বেশ কিছু বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি কটাক্ষ প্রকাশ পেয়েছিল, যার ফলে কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিজেপি-আরএসএসের সম্পর্কের স্থায়ী ক্ষতি বলে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। তবে হরিয়ানা নির্বাচনে আরএসএস কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে যে, উভয়ের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও তাদের যৌথ লক্ষ্যে কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। মোহন ভাগবতের মোদী-বিরোধী মন্তব্যগুলি আংশিক সমালোচনা হিসেবেই থেকে গেছে এবং দলটির দীর্ঘমেয়াদী শক্তির উপর কোনও প্রভাব ফেলেনি।

বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষমতা ও মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট

এতদিন ধরে বিজেপির যেকোনো নির্বাচনে সাফল্যের মূল শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা। প্রচারের সময় তৃণমূল স্তরে কর্মীদের কার্যক্রম এবং কৌশলগত মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট বিজেপিকে বড় ধরনের সুবিধা দিয়েছে। নির্বাচনী বিজ্ঞানের দিক থেকে বিজেপির কৌশল ছিল অব্যর্থ। এমনকি যেখানে কংগ্রেস তাদের প্রচারে বড় বড় নেতাদের উপর নির্ভরশীল ছিল, বিজেপি সেখানে তাদের নিবেদিত কর্মীদের কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী প্রচারকে সফল করেছে।

নির্বাচনী কৌশল ও কংগ্রেসের সীমাবদ্ধতা

হরিয়ানা নির্বাচনে কংগ্রেস কিছুটা ভাল ফলাফল করলেও, তাদের প্রচার ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে তারা বিজেপির মতো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি। প্রচারে দৌড়ানোর সময় কংগ্রেস প্রচেষ্টার অভাব দেখিয়েছে, যা তাদের ভোট বাড়াতে সাহায্য করলেও, বিজেপির মতন প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়নি।

বিজেপির প্রচার কৌশল ছিল ব্যাপক এবং ক্ষেত্রভিত্তিক। তারা প্রতি জেলার প্রার্থীদের জন্য পৃথকভাবে কৌশল প্রণয়ন করেছে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে অত্যন্ত সংগঠিতভাবে কাজ করেছে। তাদের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করেছেন এবং ভোটারদের মনোভাবকে প্রভাবিত করার জন্য দক্ষতার সাথে কাজ করেছেন।

কংগ্রেস যদিও ‘পেহলওয়ান, কিসান এবং জওয়ান’ (কুস্তিগীর, কৃষক, এবং সেনা) ইস্যুতে জোর দিয়েছিল, তবুও তা ভোটারদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি, কারণ বিজেপির মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট কৌশল অনেক বেশি কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। বিজেপির মাত্র ৩% ভোট শেয়ারের বৃদ্ধির বিপরীতে কংগ্রেসের ১১% ভোট বৃদ্ধি থাকলেও, প্রথম-পাস্ট-দ্য-পোস্ট পদ্ধতিতে এ ধরনের বৃদ্ধি সবসময় জয় নিশ্চিত করে না।

এছাড়াও, পড়ুন : পোষা খাদ্য বাজারের আকার 4.50% এর CAGR-এ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই প্রতিবেদনটি 2024-2030 এর প্রকার, বিভাজন, বৃদ্ধি এবং পূর্বাভাস দ্বারা বিশ্লেষণ কভার করে


আরএসএস ও বিজেপির রাজনৈতিক ভারসাম্য

হরিয়ানা নির্বাচনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিজেপি এবং আরএসএসের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় আরএসএসের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন না থাকার জন্য বিজেপি কিছুটা ভুগেছে, কিন্তু হরিয়ানার নির্বাচনে আরএসএসের সক্রিয় অংশগ্রহণ দলকে আবার শক্তিশালী করেছে।

এমনকি, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা যেভাবে আরএসএস থেকে দলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, সেটি পরবর্তীতে সংশোধন করা হয়েছে। হরিয়ানার নির্বাচনে এই ঐক্যকে আরও সুসংহত করেছে। দলটির মূল ভিত্তি হলো আরএসএস কর্মীদের সাংগঠনিক শক্তি, যা বিজেপিকে প্রতিটি স্তরে সমর্থন করে। তাই ভবিষ্যতে আরএসএসের ভূমিকা বিজেপির জন্য অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

হরিয়ানার ভোটারদের মনোভাব

হরিয়ানার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বরাবরই প্রতিযোগিতামূলক। ২০১৪ সাল থেকে বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতায় থাকলেও, এবার কিছু জনসমর্থনে ভাটা দেখা গেছে। তবুও, বিজেপির এই সফলতা তাদের নির্বাচনী প্রচারের কৌশল এবং সাংগঠনিক দক্ষতারই প্রতিফলন। বিজেপি নেতা মনোহর লাল খাট্টারের নেতৃত্বে এই জয় দলটির উপর আস্থা প্রকাশ করে।

বিজেপি-র এই জয় থেকে স্পষ্ট যে, আদর্শিক অবস্থানের পাশাপাশি প্রচার কৌশল এবং সাংগঠনিক শক্তিই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।