দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী আতিশী সোমবার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার আবেগ প্রকাশ করেন, যা তিনি তুলনা করেন ভরত ও রামায়ণের সেই বিখ্যাত ঘটনাটির সাথে, যেখানে ভরত ১৪ বছর ধরে রামকে নির্বাসনে পাঠানোর পর অযোধ্যার শাসন পরিচালনা করেন। আম আদমি পার্টির (এএপি) নেত্রী আতিশী দিল্লির অষ্টম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তিনি তার দলের প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আসনটি খালি রেখে অন্য চেয়ারে বসেন।
আতিশী বলেন, “আজ আমি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি এবং এই দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় আমার অনুভূতি ভরতের মতো, যখন ভরত রামের নির্বাসনের পর অযোধ্যার শাসন সামলেছিলেন। ভরত যেমন রামের খড়াউন সিংহাসনে স্থাপন করেছিলেন, তেমনি আমিও দিল্লি সরকারের দায়িত্ব সামলাবো আগামী চার মাস।”
আতিশীর এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তার গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের প্রতি, যিনি তাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন।
কেজরিওয়ালের প্রস্থান এবং আতিশীর ভূমিকা
অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হিসেবে রয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজেপির বিরুদ্ধে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আতিশী জানান, “অরবিন্দ কেজরিওয়াল রাজনীতিতে শালীনতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিজেপি তার ইমেজ নষ্ট করার জন্য কোনো প্রয়াস বাকি রাখেনি। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং তিনি ছয় মাস ধরে জেলে ছিলেন।”
আতিশী কেজরিওয়ালের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, “আমি আশা করি ফেব্রুয়ারি মাসে মানুষ আবারও কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনবে, এবং তার চেয়ারটি সিএম অফিসে ততদিন ফাঁকা থাকবে।”
১৩টি মন্ত্রণালয় নিয়ে আতিশীর দায়িত্ব
আতিশী কেজরিওয়ালের সরকারের অধীনে যেসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, সেগুলো তিনি এখনো ধরে রেখেছেন। তার দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, রাজস্ব, অর্থ, বিদ্যুৎ, এবং পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি) সহ মোট ১৩টি মন্ত্রণালয়।
দিল্লির শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে আতিশীর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কেজরিওয়াল সরকারের সময় শিক্ষা খাতে বিভিন্ন সংস্কার করা হয়েছে এবং এই প্রচেষ্টায় আতিশীর ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। শিক্ষা ছাড়াও, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
দিল্লি সরকারের নতুন মুখ
দিল্লির রাজনীতিতে আতিশী একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। তার নেতৃত্বে দিল্লি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষত শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে, তার অবদান ইতিমধ্যেই প্রসিদ্ধ হয়েছে।
এদিকে, সুরভ ভরদ্বাজ, যিনি আতিশীর পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, তার অধীনে মোট আটটি মন্ত্রণালয় রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, পর্যটন, শিল্পকলা ও সংস্কৃতি বিভাগ।
ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পূর্বাভাস
আগামী ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং কেজরিওয়ালের সমর্থনে দল পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। আতিশী ইতিমধ্যেই তার পদক্ষেপগুলি এবং রাজনৈতিক কৌশল সম্পর্কে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে কেজরিওয়ালের অনুপস্থিতিতেও দিল্লির জনগণের সেবা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।
পরবর্তী চ্যালেঞ্জ
আতিশী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যে চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন হবেন তা একদিকে যেমন কেজরিওয়ালের অনুপস্থিতি, তেমনি অন্যদিকে বিজেপির কঠোর বিরোধিতাও। তিনি ইতিমধ্যেই বলেছেন যে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাগুলি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ এবং তিনি এসব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
কেজরিওয়ালের প্রস্থানের পর আতিশীকে দিল্লির সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অবকাঠামো উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, এবং আতিশী এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী আতিশী একজন দক্ষ ও প্রতিশ্রুতিশীল নেত্রী হিসেবে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তার অধীনে দিল্লির উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলি ধারাবাহিকভাবে চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। কেজরিওয়ালের স্থানে আতিশীর নেতৃত্ব কতটা কার্যকরী হবে, তা আগামী নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে। তবে আপাতত, দিল্লির সাধারণ মানুষের স্বার্থেই আতিশী তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন, এবং তার দায়িত্ব পালন কেজরিওয়ালের নেতৃত্বেরই প্রতিফলন ঘটাবে।