ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বুধবার আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ)-কে ‘ইঁদুর’ এর সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং বিজেপি ও আরএসএসকে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই দলগুলি শুধুমাত্র ভোটের স্বার্থে ঝাড়খণ্ডে সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
রাঁচী থেকে ভার্চুয়াল সম্বোধনে হেমন্ত সোরেন বলেন, “আরএসএস ঝাড়খণ্ডে ইঁদুরের মতো প্রবেশ করছে এবং ধ্বংস করছে। যখনই তাদের হাতিয়া ও দারু নিয়ে আপনার গ্রামে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখনই তাদের তাড়িয়ে দিন।” তিনি বলেন, “বিজেপি এবং আরএসএস এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে, যেখানে ধর্মের নামে বিভাজন হবে এবং সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টি হবে।”
বিজেপি ও আরএসএসের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করার অভিযোগ
ঝাড়খণ্ডে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রী সোরেন বিজেপি ও আরএসএসকে আক্রমণ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি ও আরএসএস রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। সোরেন ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, আসন্ন নির্বাচনের আগে মন্দির ও মসজিদে মাংস ছোড়ার মতো উসকানিমূলক ঘটনা বাড়বে।
তিনি বলেন, “বিজেপি একটি ব্যবসায়ীদের এবং শিল্পপতিদের দল। তারা রাজনৈতিক নেতাদের কিনে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করছে।” উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রাক্তন ঝাড়খণ্ড মুখ্যমন্ত্রী চাম্পাই সোরেন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, যা মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পেছনে প্রাসঙ্গিক কারণ হতে পারে।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নাম উল্লেখ করে সোরেন অভিযোগ করেন, বিজেপি এবং এর সহযোগী দলগুলি অন্য রাজ্য থেকেও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার উপস্থিতি নিয়ে সোরেন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেন, বিজেপির রাজনীতিতে তারা রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে।
মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা
মুখ্যমন্ত্রী সোরেন বলেন, “বিজেপি সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি করে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করতে চাইছে। আমরা এমন পরিস্থিতি মেনে নেব না। ঝাড়খণ্ডের জনগণকে বিজেপি এবং আরএসএসের বিভাজনমূলক রাজনীতি থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে।”
এছাড়াও, তিনি বলেন, “আমরা ঝাড়খণ্ডের মাটিকে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কেউ যদি আমাদের মাটি এবং জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে আমরা তা প্রতিরোধ করব।”
পড়ুন: সোরেনের চিঠি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে; ঝাড়খণ্ডের ₹১.৩৬ লাখ কোটি বকেয়া মুক্তির আহ্বান
বিজেপির বিরুদ্ধে আর্থিক অভিযোগ
সাম্প্রতিক সময়ে, মুখ্যমন্ত্রী সোরেন বিজেপিকে ‘ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের দল’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে বলেন, “বিজেপি শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং তাদের রাজনৈতিক নেতাদের কিনে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করছে।” চাম্পাই সোরেনের বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটি প্রমাণ করে বিজেপি কিভাবে ব্যবসায়িক স্বার্থে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে।”
আরএসএস এবং বিজেপির পাল্টা বক্তব্য
বিজেপি ও আরএসএস সোরেনের এই বক্তব্যকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছে। বিজেপি নেতা এবং আরএসএসের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বলেন, “সোরেন রাজনৈতিকভাবে দিশেহারা হয়ে এই ধরনের মন্তব্য করছেন। তার সরকার ব্যর্থ হয়েছে, তাই তিনি জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে এই ধরনের অভিযোগ তুলছেন।”
ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে?
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে ঝাড়খণ্ডে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। সোরেনের এই বক্তব্য নির্বাচনের প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিজেপি ও আরএসএসের বিরুদ্ধে তার এই সরাসরি আক্রমণ ভবিষ্যতের নির্বাচনী লড়াইকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সোরেনের এই মন্তব্য শুধুমাত্র বিজেপি ও আরএসএসের বিরুদ্ধে নয়, বরং সমগ্র রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলবে। এখন দেখার বিষয় হবে ঝাড়খণ্ডের জনগণ কিভাবে এই রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা বাড়ছে, এবং মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের এই বক্তব্য আরও নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। রাজ্যটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এবং সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।