উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার সাথে যুক্ত পাঁচ জনকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এনকাউন্টারের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনায় দু’জন অভিযুক্তের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এনকাউন্টারের পর বিরোধী দলগুলো যোগী আদিত্যনাথ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে এনকাউন্টার করছে।
বাহরাইচের সহিংসতায় জড়িত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ বুধবার রাতে অভিযান চালায়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তরা নেপালের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, যেহেতু বাহরাইচ জেলা নেপালের সীমান্তের কাছে অবস্থিত।
এনকাউন্টারের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই ঘটনা সম্পূর্ণরূপে প্রশাসনিক ব্যর্থতা। সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে এনকাউন্টার করছে… যদি এনকাউন্টার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করত, তাহলে উত্তরপ্রদেশ অনেক আগেই অন্য রাজ্যগুলির থেকে এগিয়ে থাকত।”
সরকারের প্রতি বিরোধীদের অভিযোগ
অখিলেশ যাদব সংবাদমাধ্যমের সাথে আলাপচারিতায় বলেন, “যদি শোভাযাত্রার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে এটি শান্তিপূর্ণভাবে কেন পরিচালিত হয়নি? যদি তারা এমন একটি ছোট ঘটনার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে কীভাবে তারা গোটা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে?” সমাজবাদী পার্টি প্রধান এই প্রসঙ্গে এনকাউন্টারের ঘটনাকে “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতার প্রতীক” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, অন্যান্য বিরোধী দলগুলোও যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ওপর আক্রমণ শানিয়েছে। কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মন্তব্য করেছেন যে, “উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। সরকার এই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এবং সেই কারণেই এমন এনকাউন্টার ঘটাচ্ছে।”
বিএসপি প্রধান মায়াবতীও সরকারকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “যদি সরকার সঠিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে না পারে, তাহলে সাধারণ মানুষের জীবনে শৃঙ্খলা ফেরানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
পুলিশের বিবৃতি
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান যে, বাহরাইচ সহিংসতার সাথে জড়িতদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নজর রাখা হচ্ছিল। এনকাউন্টার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অভিযুক্তরা নেপালের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, তখনই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে দু’জন অভিযুক্ত গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চালাচ্ছে এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এনকাউন্টারের সময় পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সহিংসতার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল এবং তারা সফল হয়েছে।
বাহরাইচে সহিংসতার প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, বাহরাইচ জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ছিল। একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রার সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা পরবর্তীতে বড় ধরনের সহিংসতার রূপ নেয়। সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর এবং দোকানে আগুন দেওয়া হয়, এবং অনেক মানুষ আহত হয়। ঘটনার পর, বাহরাইচ জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে যে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সহিংসতার সাথে জড়িত আরও অনেককে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে। বাহরাইচের পুলিশ সুপার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছি এবং শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। যারা সহিংসতার সাথে জড়িত, তাদের কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না।”
এছাড়াও, পড়ুন : মেশিন সেন্সর বাজারের আকার 6.60% এর CAGR-এ বাড়ছে, এই প্রতিবেদনটি 2024-2030 এর ধরন, বিভাজন, বৃদ্ধি এবং পূর্বাভাস দ্বারা বিশ্লেষণ কভার করে
ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরায় চালু
এই পরিস্থিতির পর বাহরাইচ জেলায় বেশ কয়েকদিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরায় চালু করা হয়েছে। পুলিশের তরফ থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে গুজব ছড়ালে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে যে, বাহরাইচ জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং পুলিশ প্রশাসন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
সাম্প্রতিক এনকাউন্টারের রাজনীতি
উত্তরপ্রদেশে এনকাউন্টারের রাজনীতি নতুন কিছু নয়। অতীতেও বহুবার এনকাউন্টারের মাধ্যমে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, বর্তমান সরকার এই ধরনের এনকাউন্টারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, সরকার অপরাধ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো আপোষ করবে না।