সীমান্তে অবৈধ অভিবাসী রুখতে রাজ্য ও বিএসএফ-এর সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান, বললেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মাউৎপল পরাশর, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪ | ০৭:৫৯ অপরাহ্ন

রাজনীতি

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রবিবার সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে রাজ্য সরকারগুলোর এবং সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)-এর মধ্যে আরও সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষত, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর মধ্যে এই সমন্বয়ের গুরুত্বের ওপর তিনি জোর দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী প্রতিটি রাজ্য সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে এবং বিএসএফের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে অসম ও ত্রিপুরা ইতিমধ্যে সমন্বিতভাবে কাজ করছে, তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও যদি একইভাবে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়, তাহলে এটি একটি সুসংগঠিত এবং পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, “আমরা কাউকে ঠেলে ফেরত পাঠাই, কিন্তু তারা যদি আবার পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে, তাহলে এটি সমস্যার সমাধান করবে না। অসম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয়কে বিএসএফকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করতে হবে। নাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।”

সীমান্ত এলাকায় ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ

সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের প্রসঙ্গে তিনি সতর্কতা জারি করে বলেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে হিন্দু অভিবাসীদের প্রত্যাশা ছিল, তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে রোহিঙ্গা মুসলিমরাই প্রবেশের চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতার কারণে হিন্দুরা ভারতে আসবে বলে আমাদের ধারণা ছিল, কিন্তু তথ্য অনুযায়ী আমরা শুধুমাত্র রোহিঙ্গা মুসলিমদের আসতে দেখছি। এটি প্রমাণ করে যে হিন্দু বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিষয়ে প্রচলিত ধারণা ভুল। এছাড়া, রোহিঙ্গা মুসলিমরা এখনও দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করছে, বিশেষত যেসব রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তে রয়েছে।”

পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে উদ্বেগ

পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেন, “যদি পশ্চিমবঙ্গ সরকার যথাযথভাবে অভিবাসী সনাক্তকরণে অংশ না নেয়, তাহলে অন্যান্য রাজ্যগুলোর প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না। বর্তমানে অসম ও ত্রিপুরা একসঙ্গে কাজ করছে, কিন্তু যদি পশ্চিমবঙ্গও এতে যুক্ত হয়, তাহলে আমরা সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারব।”

বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষার অবস্থা

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর অভিবাসী প্রবেশের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে, কিন্তু তবুও সীমান্তের কিছু অংশে এখনও অসংখ্য ঝুঁকি রয়ে গেছে। অসম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয়ের মতো রাজ্যগুলোতে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশের প্রবণতা বাড়ছে, যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং সামাজিক কাঠামোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

রোহিঙ্গা অভিবাসীদের ঢল

সম্প্রতি রোহিঙ্গা অভিবাসীদের প্রবেশের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমান্তে থাকা রাজ্যগুলোতে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মার বক্তব্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা মুসলিমদের এই অবৈধ প্রবেশের বিষয়ে রাজ্য সরকারগুলিকে আরও সতর্ক হতে হবে।

তিনি বলেন, “এই অভিবাসী প্রবেশের ফলে রাজ্যগুলোর সামাজিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। আমরা ইতিমধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি, তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সকল রাজ্য সরকারকে বিএসএফের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে হবে।”

এছাড়াও, পড়ুন : গ্লোবাল অ্যামপ্লিফায়ার ICs বাজারের আকার 2023 সালে USD 1.60 বিলিয়ন ছিল, এই প্রতিবেদনটি বাজারের বৃদ্ধি, প্রবণতা, সুযোগ এবং 2024-2030 পূর্বাভাস কভার করে

অসমে সীমান্ত সুরক্ষা তৎপরতা

অসম সরকার বিএসএফের সঙ্গে মিলিতভাবে সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করতে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা জানান, রাজ্য সরকার প্রতিটি প্রবেশ পথের ওপর নজরদারি রাখছে এবং সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, “আমরা সীমান্ত এলাকায় প্রত্যেক সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করছি এবং তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের আরও সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন, বিশেষ করে অন্যান্য সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির সহযোগিতা ছাড়া এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আক্রমণ করে বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাষ্ট্রসমর্থিত অনুপ্রবেশকে সমর্থন করছে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।”

শেষ কথা

মুখ্যমন্ত্রী শর্মার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের বিষয়ে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে। তবে, অন্যান্য রাজ্য সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে।