গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা উচিত কিনা, তা নিয়ে অনেকের মনে দ্বিধা থাকে। গর্ভাবস্থায় শরীরচর্চা করা নিরাপদ কি না, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক এবং সুস্থ গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক কার্যকলাপ গর্ভপাত, কম ওজনের সন্তান জন্মদান বা প্রিম্যাচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি বাড়ায় না। বরং, শারীরিক সক্রিয়তা মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের গুরুত্ব
বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখতে ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু মায়ের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে না, বরং গর্ভাবস্থার কিছু সাধারণ সমস্যা যেমন কোমরব্যথা, ক্লান্তি এবং বদহজম কমাতেও সাহায্য করে। এছাড়া, ব্যায়াম গর্ভাবস্থার সময় হরমোনের পরিবর্তনজনিত মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা মা এবং শিশুর জন্য ভালো।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, গর্ভাবস্থার সময় শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখা মায়ের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং ডেলিভারির পর দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। এটি মায়ের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং প্রসবের সময়ের সহনশীলতা বাড়ায়।
গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের ব্যায়াম করা নিরাপদ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় করা নিরাপদ, আবার কিছু ব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সাধারণত নিম্নলিখিত ব্যায়ামগুলোকে নিরাপদ হিসেবে মনে করেন:
- হাঁটাচলা: গর্ভাবস্থায় হাঁটা সবচেয়ে সহজ এবং নিরাপদ ব্যায়ামের একটি। এটি মায়ের শরীরে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে না এবং এটি কোনো রকম যন্ত্রণা ছাড়াই সহজে করা যায়।
- জলব্যায়াম (অ্যাকুয়াটিক এক্সারসাইজ): সাঁতার এবং পানিতে ব্যায়াম করা শরীরের ওজন কমায় এবং কোমর ও পায়ের উপর চাপ কমায়। এটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য আরামদায়ক একটি বিকল্প।
- প্রি-নেটাল যোগ ব্যায়াম: যোগ ব্যায়াম শরীরকে নমনীয় এবং সক্রিয় রাখে। এটি মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক, তবে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া যোগ ব্যায়ামের অগ্রিম আসন এড়িয়ে চলা উচিত।
- স্ট্রেচিং: শরীরের পেশিগুলোকে নমনীয় করতে এবং ব্যথা ও খিঁচুনি থেকে মুক্তি পেতে স্ট্রেচিং বা টান দেওয়ার ব্যায়াম উপকারী হতে পারে।
এছাড়াও, পড়ুন : 8-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার বাজার: ছোট আকার, বিশাল সম্ভাবনা!
কোন ধরনের ব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত?
গর্ভাবস্থায় কিছু ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যকলাপ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে এই ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা উচিত:
- ভারী ওজন তোলা: গর্ভাবস্থায় ভারী ওজন তোলা এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এটি পেটের পেশিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- উচ্চ প্রভাব ব্যায়াম: যেমন জগিং, স্কিপিং, বা হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (HIIT), যা শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- পেটের উপর শুয়ে ব্যায়াম: গর্ভের বৃদ্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, মায়েদের পেটের উপর শুয়ে কোনও ব্যায়াম করা বিপজ্জনক হতে পারে।
- উচ্চ তাপমাত্রায় ব্যায়াম: বিশেষজ্ঞরা বলেন যে গর্ভাবস্থায় উচ্চ তাপমাত্রায় ব্যায়াম করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এর ফলে ডিহাইড্রেশন এবং অতিরিক্ত উত্তাপে সমস্যা হতে পারে, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
কী কী করবেন গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময়
গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময় কিছু বিষয় মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলার পরামর্শ দেন:
- বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম শুরু করার আগে আপনার ডাক্তার বা ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন। তারা আপনার শরীরের অবস্থা অনুযায়ী সঠিক ব্যায়ামের ধরন বেছে নিতে সাহায্য করবেন।
- প্রচুর পানি পান করুন: ব্যায়ামের সময় শরীরকে হাইড্রেট রাখা জরুরি। পানি পান না করলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে এবং তা থেকে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- আরামদায়ক পোশাক পরুন: ব্যায়াম করার সময় আরামদায়ক এবং হালকা পোশাক পরা উচিত, যা শরীরের গতিবিধিতে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।
- উষ্ণায়ন এবং কুলডাউন: যে কোনও ব্যায়ামের আগে এবং পরে কিছু সময়ের জন্য উষ্ণায়ন এবং কুলডাউন করতে হবে। এটি শরীরকে ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুত করে এবং ব্যথা বা খিঁচুনি এড়াতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম না করার নির্দেশ
সব গর্ভবতী মহিলার জন্য ব্যায়াম করা সবসময় নিরাপদ নয়। কিছু শারীরিক জটিলতার কারণে গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত। যেসব মহিলার গর্ভাবস্থায় জটিলতা রয়েছে যেমন, প্ল্যাসেন্টার সমস্যা, রক্তপাত, উচ্চ রক্তচাপ বা গর্ভাবস্থার কারণে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের ব্যায়াম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা অবশ্যই একজন প্রশিক্ষক বা বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করা উচিত।