ব্যায়াম কতটুকু প্রয়োজন এবং তা কতটা তীব্র হওয়া উচিত, তা বয়স ও লক্ষ্যের ওপর নির্ভর করে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা শরীরের জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি মূল অঙ্গগুলো যেমন হৃৎপিণ্ড ও হাড়কে শক্তিশালী এবং উন্নত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যায়াম শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তা অবশ্যই নিয়মিতভাবে করা উচিত।
সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বেঙ্গালুরুর সাকরা ওয়ার্ল্ড হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের পরিচালক এবং প্রধান ডাঃ শ্রীকান্ত শেঠি শারীরিক ব্যায়ামের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “সাধারণ নির্দেশিকাগুলি অনুসারে, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার অ্যারোবিক ব্যায়াম করা উচিত। এর পাশাপাশি দু’টি শক্তিবর্ধক ব্যায়ামও থাকতে হবে। হাঁটা হৃদরোগের জন্য কার্যকর হতে পারে, কিন্তু এটি আপনার পেশী উন্নত করে না। তাই যারা প্রতিদিন ১০,০০০ ধাপ হাঁটার অভ্যাস করেছেন, তাদের মনে রাখা উচিত যে এটি শুধুমাত্র হৃদরোগের জন্য সহায়ক, পেশী শক্তিশালী করার জন্য নয়।”
এতে বোঝা যাচ্ছে, শুধুমাত্র হাঁটা নয়, পেশী উন্নত করার জন্য শক্তিবর্ধক ব্যায়ামও করতে হবে। শক্তিবর্ধক ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে ভার উত্তোলন, যোগব্যায়াম, পুশআপ, স্কোয়াট ইত্যাদি।
কার্ডিও ও শক্তিবর্ধক ব্যায়ামের সঠিক ভারসাম্য কী?
ডাঃ শেঠি আরও বলেন, “যদি আপনার লক্ষ্য ওজন কমানো হয়, তবে সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন মাঝারি মাত্রার কার্ডিও ব্যায়াম করা উচিত। তবে যদি আপনার সাধারণ স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব বেশি থাকে, তাহলে সপ্তাহে তিন দিন ব্যায়াম করাই যথেষ্ট হতে পারে। কার্ডিও ব্যায়াম হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে, সহনশীলতা বাড়ায় এবং ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে। কার্ডিও ব্যায়ামের মধ্যে হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটা অন্তর্ভুক্ত। এগুলো সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচবার করা উচিত।”
কার্ডিও ব্যায়াম হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো হলেও এটি পেশী শক্তিশালী করে না। তাই পেশী শক্তিশালী করার জন্য শক্তিবর্ধক ব্যায়ামও অত্যন্ত জরুরি।
১৫০ মিনিটের ব্যায়ামের পেছনের বিজ্ঞান
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর মতে, সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার অ্যারোবিক ব্যায়াম করা উচিত। এর পাশাপাশি পেশী উন্নত করার জন্য সপ্তাহে দু’দিন শক্তিবর্ধক ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। WHO-এর মতে, এই নির্দেশিকাগুলি অনুসরণ করলে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদির ঝুঁকি কমানো যায়।
মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম মানে আপনি এমন একটি মাত্রায় কাজ করছেন যেখানে আপনি কথা বলতে পারবেন, তবে গান গাইতে পারবেন না। এটি হাঁটা, হালকা সাইক্লিং, বা হালকা জগিং হতে পারে। উচ্চমাত্রার ব্যায়াম হলে, আপনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করবেন এবং দীর্ঘ সময় কথা বলতে অসুবিধা হবে।
ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ও এর সুফল
শারীরিক ব্যায়াম শুধুমাত্র শরীরকে উন্নত করে না, এটি মনের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, মানসিক চাপ কমে, এবং হতাশা ও উদ্বেগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এছাড়াও, ব্যায়াম শরীরে এন্ডরফিন নিঃসরণ করে, যা স্বাভাবিকভাবেই মনের ভালো অনুভূতি তৈরি করে।
শারীরিক ব্যায়ামের সুফলের মধ্যে আরও রয়েছে ওজন নিয়ন্ত্রণ, হাড় ও পেশী শক্তিশালী করা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, ঘুমের মান উন্নত করা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো।
১০,০০০ ধাপ হাঁটার মিথ
বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন, প্রতিদিন ১০,০০০ ধাপ হাঁটা মানেই পর্যাপ্ত ব্যায়াম। যদিও এটি হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো, তবে শরীরের অন্যান্য অংশে তেমন কোনো উপকার করে না। শুধুমাত্র হাঁটা যথেষ্ট নয়, শক্তিবর্ধক ব্যায়ামও করতে হবে। হাঁটার পাশাপাশি অন্যান্য ধরনের ব্যায়াম যেমন স্কোয়াট, লাংস, পুশআপ বা ভার উত্তোলন করতে হবে।
ডাঃ শেঠি আরও বলেন, “হাঁটা হার্টের জন্য ভালো হলেও, পেশীর উন্নতির জন্য শক্তিবর্ধক ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি।”
কোন ব্যায়াম আপনার জন্য সেরা?
আপনার বয়স, শারীরিক ক্ষমতা ও লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যায়াম নির্বাচন করা উচিত। কার্ডিও ব্যায়াম যেমন দৌড়ানো, সাইক্লিং, বা সাঁতার কাটা হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো, তবে শক্তিবর্ধক ব্যায়ামও অত্যন্ত জরুরি। ভার উত্তোলন, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম যেমন পুশআপ ও স্কোয়াট পেশী উন্নত করে।
যারা নিয়মিত ব্যায়াম করতে চান, তাদের উচিত সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন কার্ডিও ব্যায়াম করা এবং কমপক্ষে দু’দিন শক্তিবর্ধক ব্যায়াম করা।
সর্বশেষে: ব্যায়াম শুধু ওজন কমানোর জন্য নয়, এটি একটি সুস্থ জীবনযাপনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। শরীরের প্রতিটি অংশকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।