বিশ্ববিখ্যাত পাকিস্তানি কাওয়াল নুসরাত ফতে আলি খান যিনি তাঁর অসাধারণ কাওয়ালির মাধ্যমে সারা বিশ্বে সংগীতপ্রেমীদের মন জয় করেছিলেন, তাঁর চারটি নতুন ট্র্যাক প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯০ সালে রেকর্ড করা এই চারটি গান এখন তাঁর মৃত্যুর ২৭ বছর পর ‘চেইন অব লাইট’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। এই অ্যালবাম শুধু সংগীতপ্রেমীদের জন্য একটি উপহার নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশও।
প্রেক্ষাপট: এক বিস্মৃত ধন খুঁজে পাওয়া
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তানি ফটোসাংবাদিক সাইয়না বশির এক ডকুমেন্টারির জন্য কানাডিয়ান সংগীতশিল্পী মাইকেল ব্রুকের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। সেই ডকুমেন্টারিটি নুসরাত ফতে আলি খানের জীবন ও সংগীতকে কেন্দ্র করে নির্মিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, মাইকেল ব্রুক এবং নুসরাত একসঙ্গে অনেক কাজ করেছেন এবং এই সাক্ষাৎকারে ব্রুক নুসরাতের সঙ্গে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছিলেন।
এই সাক্ষাৎকার চলাকালীন এক পর্যায়ে বশির জানতে চাইলেন, “এই মুহূর্তে আপনি কি কাজ করছেন?” উত্তরে ব্রুক যা বললেন, তা বশিরের জন্য যেন এক বিস্ময়ের ঢেউ।
‘নতুন নুসরাত অ্যালবাম আসছে’
সাইয়না বশির সেই মূহুর্তটি স্মরণ করে বলেন, “সাক্ষাৎকারের মাঝপথে ব্রুক তাঁর ইমেইল চেক করতে করতে হঠাৎ বললেন, ‘তারা আমাকে অনুমতি দিয়েছে, এখন আমি আপনাকে বলতে পারি। নতুন নুসরাত অ্যালবাম আসছে, এবং আমি সেটির প্রযোজনা করছি।’ আমি তখন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।”
এই বিস্ময়কর ঘটনার পর, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ‘চেইন অব লাইট’ নামক অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে এই খবর সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল এবং এক অজানা ধন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এই সংগীত।
হারানো সেশনের গল্প: ‘রিয়েল ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ রেকর্ডিং
১৯৯০ সালে, নুসরাত ফতে আলি খান এবং তাঁর কাওয়ালি দল (যা সাধারণভাবে ‘পার্টি’ নামে পরিচিত) ইংল্যান্ডের পিটার গ্যাব্রিয়েলের ‘রিয়েল ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ স্টুডিওতে চারটি গান রেকর্ড করেছিলেন। সেই সময়ে, রেকর্ডিং সেশনটিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করা হয়নি।
রেকর্ডিং শেষ হওয়ার পর, সেই টেপটি লন্ডনের একটি রেকর্ড লেবেল আর্কাইভে জমা দেওয়া হয়, এবং তারপর সেটি এক প্রকার বিস্মৃত হয়ে যায়। দুই দশকের বেশি সময় ধরে সেই টেপ আর্কাইভে পড়ে থাকে, কেউ তা খুঁজে দেখার প্রয়োজন মনে করেনি।
কিন্তু ২০২২ সালে যখন মাইকেল ব্রুকের হাতে সেই হারানো রেকর্ডিং ফিরে আসে, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে এটি সংগীত ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সংযোজন করতে চলেছে।
‘উস্তাদ’: নুসরাত ফতে আলি খানকে কেন্দ্র করে ডকুমেন্টারি
এই অ্যালবামের খবরের সঙ্গে যুক্ত আরেকটি বড় প্রকল্প হলো ‘উস্তাদ’ নামের একটি ডকুমেন্টারি, যা আগামী বছর মুক্তি পাবে। এই ডকুমেন্টারিটি নুসরাত ফতে আলি খানের জীবন ও কর্মকে কেন্দ্র করে নির্মিত হচ্ছে, যেখানে সংগীত জগতের বিভিন্ন তারকা এবং নুসরাতের সঙ্গে কাজ করা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার থাকবে। মাইকেল ব্রুক, যিনি নুসরাতের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেছেন, তিনি ডকুমেন্টারির জন্য সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
এছাড়াও, পড়ুন : আইটি মূল্যায়ন এবং অপ্টিমাইজেশান শিল্প বিশ্লেষণ রিপোর্ট
নতুন অ্যালবাম ‘চেইন অব লাইট’: এক সংগীতিক মহাকাব্য
নুসরাত ফতে আলি খানের অ্যালবাম ‘চেইন অব লাইট’-এ মোট চারটি গান রয়েছে, যেগুলি ১৯৯০ সালে রেকর্ড করা হয়েছিল। এই অ্যালবামটি যেমন এক সংগীতিক মহাকাব্য, তেমনই এটি নুসরাতের ভক্তদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় উপহার।
নুসরাতের গাওয়া গানগুলি সময়ের সীমানা পেরিয়ে অনন্ত কাল পর্যন্ত টিকে থাকবে, এবং এই নতুন অ্যালবামটি সেই ঐতিহ্যকে আরও দীর্ঘায়িত করবে। যদিও নুসরাত ফতে আলি খানের অনেক জনপ্রিয় গান রয়েছে, এই অ্যালবামের গানগুলি তাঁর অজানা আরেকটি দিক তুলে ধরবে।
মাইকেল ব্রুকের ভূমিকা: অ্যালবাম প্রযোজনা
মাইকেল ব্রুক যিনি নুসরাতের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তাঁকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন, এই নতুন অ্যালবামের প্রযোজনা করছেন। ব্রুক তাঁর প্রযোজনার মাধ্যমে নুসরাতের কণ্ঠ এবং সুরের সৌন্দর্যকে আরও উজ্জ্বল করেছেন।
ব্রুক বলেন, “এই গানগুলির মধ্যে এক অদ্ভুত মাধুর্য রয়েছে, যা নুসরাতের সংগীতকে আরও বিশেষ করে তুলেছে। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, এই গানগুলি বিশ্বের সামনে আসার প্রয়োজন ছিল।”
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া: এক আশ্চর্য মুহূর্ত
নুসরাত ফতে আলি খানের ভক্তরা এই অ্যালবামের প্রকাশে অত্যন্ত উত্তেজিত। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, নুসরাত ফতে আলি খান ছিলেন সংগীতের এক কিংবদন্তি, এবং তাঁর মৃত্যুর ২৭ বছর পর তাঁর নতুন গান শোনা সত্যিই এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
ভক্তদের একাংশ বলেন, “নুসরাত ফতে আলি খানের কাওয়ালি সঙ্গীত শুধুমাত্র একটি শিল্প নয়, এটি আমাদের হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলে। তাঁর গান শুনলে মনে হয় যেন আধ্যাত্মিক এক যাত্রায় রওনা হচ্ছি।”
নতুন অ্যালবাম ‘চেইন অব লাইট’-এর মাধ্যমে নুসরাত ফতে আলি খানের সংগীত নতুন প্রজন্মের সামনে আসবে, এবং তাঁর সঙ্গীতের ভক্তদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
এক অমূল্য ধন
‘চেইন অব লাইট’ অ্যালবামটি শুধু একটি নতুন সংগীতের সংগ্রহ নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। নুসরাত ফতে আলি খানের গানগুলি আমাদের হৃদয়ে গেঁথে থাকবে, এবং এই নতুন অ্যালবামটি সেই ঐতিহ্যকে আরও উজ্জ্বল করবে।