অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানামস (টিটিডি), যা তিরুমালায় অবস্থিত পবিত্র শ্রী বেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দির পরিচালনা করে, সম্প্রতি তিরুপতি লাড্ডু প্রসাদের উপাদানের গুণগত মান নিয়ে বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছে। মন্দিরের বিখ্যাত লাড্ডু প্রসাদে উপাদানের ভেজালের অভিযোগ উঠেছে, যা ভক্তদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে টিটিডি একটি সংবেদনশীল প্যানেল গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা খাদ্য নমুনার গুণমান পরীক্ষা করবে।
সংবেদনশীল প্যানেল গঠন:
টিটিডির নির্বাহী কর্মকর্তা জে. শ্যামলা রাও রবিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান যে, এই প্যানেল খাদ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করবে মূলত সুগন্ধ, স্বাদ এবং গঠন অনুযায়ী। লাড্ডু প্রসাদের সাথে যুক্ত উপাদানের মান নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা নিরসনের লক্ষ্যে এই প্যানেল গঠন করা হয়েছে। রাও বলেন, “আমরা আশা করি এই পদক্ষেপ ভক্তদের মধ্যে আস্থা পুনরুদ্ধার করবে এবং তারা শান্তিপূর্ণ মনে প্রার্থনা করতে পারবেন।”
তিনি আরও জানান, মন্দিরের পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য আগামীকাল একদিনের সম্প্রোক্ষণা এবং শান্তি হোম (পরিশোধন আচার) করা হবে। “আমরা আশা করি এটি মন্দিরের পবিত্রতা পুনঃস্থাপন করবে,” তিনি উল্লেখ করেন।
অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের পদক্ষেপ:
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু এই বিতর্কের তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি (এসআইটি) গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন একজন ইনস্পেক্টর জেনারেল বা তারও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। নাইডু বলেন, “একজন আইজি স্তরের বা তারও উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটি সমস্ত কারণ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মন্দির পরিচালনার সাথে যুক্ত অন্যান্য বিষয়ে তদন্ত করবে এবং সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে। ভেজাল প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কোনওরকম আপস করা হবে না।”
এছাড়াও, পড়ুন: পয়েন্ট-অফ-ইউজ অ্যাবেটমেন্ট সিস্টেম মার্কেট কৌশলগত অন্তর্দৃষ্টি
মুখ্যমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন যে পূর্ববর্তী সরকারের সময় টিটিডি বোর্ডে নিয়োগগুলি “জুয়ার মতো” হয়ে উঠেছিল এবং এর ফলে মন্দির পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং মন্দির পরিচালনায় নিয়মিততা বজায় রাখার ওপর জোর দেন।
বিতর্কের সূত্রপাত:
তিরুপতি লাড্ডু প্রসাদ অন্ধ্রপ্রদেশের অন্যতম বিখ্যাত এবং পবিত্র প্রসাদ, যা ভক্তদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি তৈরির জন্য মূলত ঘি, চিনি, বেসন, কাজু এবং এলাচ ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে যে, লাড্ডু তৈরিতে নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষত ঘি এবং অন্যান্য উপকরণে ভেজাল মিশ্রিত হয়েছে। এই অভিযোগ ভক্তদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং মন্দির কর্তৃপক্ষের উপর আস্থা নষ্ট হয়েছে।
টিটিডি এই পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ভক্তদের আস্থা পুনরুদ্ধারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সংবেদনশীল প্যানেল গঠন তারই একটি অংশ, যা খাদ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বিতর্ক এড়াতে সাহায্য করবে।
মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষায় উদ্যোগ:
মন্দির কর্তৃপক্ষের মতে, সম্প্রোক্ষণা এবং শান্তি হোম আচারগুলি মন্দিরের পবিত্রতা এবং শুদ্ধতা পুনঃস্থাপনের একটি প্রচেষ্টা। এই আচারগুলি মূলত মন্দিরের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে মন্দির পুরোহিতরা উপস্থিত থাকবেন। রাও উল্লেখ করেন, “আমরা আশা করছি যে এই আচারগুলি ভক্তদের মধ্যে আস্থা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে এবং তারা নির্ভয়ে প্রার্থনা করতে পারবেন।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
টিটিডি কর্তৃপক্ষ মন্দিরের পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনতে এবং লাড্ডু প্রসাদের গুণগত মান বজায় রাখতে নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করবে। এছাড়াও, মন্দির পরিচালনায় যুক্ত সমস্ত প্রক্রিয়া আরও নিয়মতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু মন্দিরের পরিচালনা ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত অনিয়ম দূর করতে এবং নতুন নিয়ম প্রবর্তন করতে বদ্ধপরিকর। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের বিতর্ক এড়াতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং ভক্তদের আস্থা পুনঃস্থাপন করা হবে।
সারসংক্ষেপ:
তিরুপতি লাড্ডু বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার এবং টিটিডি কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। সংবেদনশীল প্যানেল গঠন, বিশেষ তদন্ত কমিটি এবং পরিশোধন আচারগুলির মাধ্যমে মন্দিরের পবিত্রতা পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নাইডু মন্দিরের পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনতে এবং ভেজাল প্রতিরোধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এই পদক্ষেপগুলি ভবিষ্যতে তিরুপতি লাড্ডু প্রসাদের গুণগত মান বজায় রাখতে এবং ভক্তদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।