প্রধানমন্ত্রী মোদির গাজার মানবিক সংকট নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ

প্রধানমন্ত্রী মোদির গাজার মানবিক সংকট নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ

রাজনীতি

নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন, যখন তিনি নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (UNGA) অধিবেশনের ফাঁকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (MEA) মুখপাত্র রণধীর জয়স্বাল একটি টুইটে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে বৈঠক করেন এবং গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ভারতের ধারাবাহিক সমর্থন পুনরায় নিশ্চিত করেন।”

গাজার সাম্প্রতিক সংকট বিশ্বজুড়ে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধ, সংঘর্ষ এবং মানবিক সংকটের কারণে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি এর আগে হিন্দুস্তানের মানবিক দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরেছিলেন এবং তিনি গাজার মানুষদের সাহায্যের জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে জোরালো সমর্থন

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধানে ভারত বরাবরই দুই রাষ্ট্রের সমাধানের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। এই দ্বিরাষ্ট্র সমাধান নিশ্চিত করতে ভারত একাধিকবার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে আওয়াজ তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং প্রেসিডেন্ট আব্বাসের আলোচনায় দুই রাষ্ট্র সমাধানকে আবারও পুনরায় উল্লেখ করা হয়, যেখানে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশাপাশি ইসরায়েলের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়।

কুওয়াড নেতাদের যৌথ বিবৃতি

ইউনাইটেড নেশনের অধিবেশনে কুওয়াড (QUAD) গোষ্ঠীর নেতারা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধানের জন্য দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা একটি সার্বভৌম, কার্যকরী ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে ইসরায়েলের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগগুলিও বিবেচনায় রাখা হবে। এ ধরনের একটি সমাধান উভয় পক্ষকেই দীর্ঘস্থায়ী এবং নিরাপদ শান্তির পথে এগিয়ে নেবে।”

যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে, “যে কোনও একতরফা পদক্ষেপ যা দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে দুর্বল করে, যেমন ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ এবং সবপক্ষের চরমপন্থা, তা বন্ধ হওয়া উচিত। আমরা এই সংঘাতকে রাশ টানার গুরুত্ব তুলে ধরছি এবং এর বিস্তার ও আঞ্চলিক স্তরে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রোধ করতে হবে।”

গাজার মানবিক পরিস্থিতি ও ভারতের সহায়তা

গাজার মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে, এবং এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজায় সংঘাত ও সহিংসতার কারণে অসংখ্য মানুষ নিহত এবং আহত হয়েছে, এবং জীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তাগুলিও সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছে।

ভারত ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা প্রদান করে চলেছে এবং এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থী সংস্থা (UNRWA)-তে প্রাথমিকভাবে ২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে। এটি গাজার মানবিক সহায়তা উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভারত, সবসময়ই গাজার মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির সাম্প্রতিক মন্তব্যে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি তিনি ইসরায়েলি হামাস হামলার নিন্দা করে বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সংঘাতের অবসান ঘটে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এছাড়াও, পড়ুন :হ্যান্ডেল আবেদনকারীদের বাজারের উদীয়মান বাজার প্রবণতা কি?


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভারতের ভূমিকা

গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিক্রিয়া বাড়ছে। বিভিন্ন দেশ এই সংকটের সমাধানের জন্য কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে, এই সংকটের সমাধান সহজ নয়, কারণ উভয় পক্ষের মধ্যে বহু পুরানো শত্রুতা ও সংঘর্ষের ইতিহাস রয়েছে।

ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে গাজার জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের পক্ষে থাকলেও, তা স্বচ্ছভাবে ইসরায়েলের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগের কথাও তুলে ধরেছে। ভারতের এই সুষম কূটনৈতিক অবস্থান আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রশংসিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি যখনই গাজার সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এটি একাধারে ভারতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

গাজার ভবিষ্যৎ কী?

গাজার অবস্থা কতটা অবনতির দিকে যাবে তা বলা মুশকিল। যুদ্ধ ও সংঘাত সবসময়ই মানবিক সংকটের জন্ম দেয় এবং এর ক্ষতি পূরণ হতে অনেক সময় লেগে যায়। ভারতের মত বিশ্বব্যাপী বড় শক্তির দেশগুলো যদি সক্রিয়ভাবে এই ধরনের মানবিক সংকট সমাধানের জন্য উদ্যোগী হয়, তাহলে একদিন হয়তো শান্তি ফিরে আসতে পারে।

বিশ্বের সামনে গাজা শুধু একটি মানবিক সংকট নয়, এটি এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সংকটও। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবিলম্বে কূটনৈতিক আলাপ শুরু করে দুই রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া।

ভারতের এই শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতি প্রতিশ্রুতি বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রেরণ করেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্তিশালী দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।