অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী এবং “টাইটানিক” চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেত্রী ক্যাথি বেটস সম্প্রতি তার ওজন কমানোর অসাধারণ যাত্রার কথা প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘ ছয় বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে তিনি ১০০ পাউন্ড (প্রায় ৪৫ কেজি) ওজন কমিয়েছেন। বেটস বলেছেন, “এটা আমার জীবনে এক বিশাল পরিবর্তন এনেছে। আমি মনে করি কলেজ জীবনের পর এই প্রথমবার আমি এতটা স্লিম হলাম।”
ক্যাথি বেটস বর্তমানে ৭৬ বছর বয়সী এবং সিবিএসের “ম্যাটলক” শো-এর পুনরায় প্রচারে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন। তিনি তার নতুন ফিটনেস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। ভ্যারাইটির সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে বেটস জানান, কীভাবে মাইন্ডফুল ইটিং (মনোযোগী খাদ্যাভ্যাস) এবং ধৈর্য ধরে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটি সফল করেছেন। তার এই ওজন কমানোর যাত্রা, বিশেষ করে তার লিম্ফেডেমা রোগের সঙ্গে সংগ্রাম, তাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
ধৈর্য এবং মাইন্ডফুল ইটিং-এর মাধ্যমে পরিবর্তন
ক্যাথি বেটসের মতে, ওজন কমানোর প্রধান উপায় ছিল ধৈর্য এবং মাইন্ডফুল ইটিং। তিনি বলেন, “আমি বুঝেছি যে ওজন কমানোর জন্য দ্রুত ফলাফল আশা করা উচিত নয়। আমি প্রতিদিনের অভ্যাসগুলোকে মনোযোগের সঙ্গে মেনে চলেছি এবং ধীরে ধীরে আমার শরীরে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি।”
বেটস তার এই যাত্রার শুরুর দিকে কীভাবে অতিরিক্ত ওজন তার জীবনের উপর প্রভাব ফেলছিল সেটাও উল্লেখ করেছেন। বিশেষত, ২০১১ সালে “হ্যারির ল’” নামে টেলিভিশন শো-এর শুটিং চলাকালীন সময়ে তিনি দেখেন যে অতিরিক্ত ওজন তার কাজের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে। তিনি বলেন, “প্রতিবার সুযোগ পেলে আমাকে বসে পড়তে হতো। হাঁটা চলাফেরা একেবারেই কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমি লজ্জিত ছিলাম যে নিজেকে এতটা ভারি হতে দিয়েছি, কিন্তু এখন আমি এক বিশাল পরিমাণে এনার্জি অনুভব করছি।”
লিম্ফেডেমার সঙ্গে সংগ্রাম এবং ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত
ক্যাথি বেটস দীর্ঘদিন ধরে লিম্ফেডেমা রোগে আক্রান্ত ছিলেন, যা মূলত ক্যান্সার চিকিৎসার পরবর্তী ধাপে একটি সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা যায়। বেটস ২০১২ সালে স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে উঠেছিলেন এবং এরপর তার শরীরে লিম্ফেডেমা দেখা দেয়। এই রোগটি শরীরের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে প্রভাবিত করে এবং অঙ্গগুলির ফোলাভাবের কারণ হয়।
বেটস এই অবস্থাকে আরো খারাপ হতে দিতে চাননি। তিনি বলেন, “আমি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার ওজন কমাতে হবে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে হবে। আমার লিম্ফেডেমা নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে ওজন কমানোই একমাত্র উপায়।”
মাইন্ডফুল ইটিং-এর ভূমিকা
বেটস তার খাদ্যাভ্যাসের প্রতি মনোযোগ দিয়ে একটি মাইন্ডফুল ইটিং রুটিন তৈরি করেছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিটি খাবারের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়—কী খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন, এবং কোন সময় খাচ্ছেন তা বুঝে খাওয়া। এর ফলে তিনি তার খাওয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি ছোট ছোট খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করেছি। প্রতিটি খাবারকে মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করতাম এবং আমার শরীরের সিগন্যালগুলিকে মনোযোগ দিতাম। আমি বুঝতাম কখন আমার শরীর সত্যিই ক্ষুধার্ত এবং কখন শুধু অভ্যাসবশত খাওয়া হচ্ছে।”
এছাড়াও, পড়ুন :গ্লোবাল এসি ফুড ওয়েস্ট কম্পোস্টিং মেশিন মার্কেটকে কী চালনা করছে?
ধৈর্য এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে থাকা
ক্যাথি বেটসের ওজন কমানোর যাত্রাটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া ছিল। তিনি কখনই তাড়াহুড়ো করে ফলাফল পেতে চাননি। তার মতে, “ওজন কমানোর যাত্রা ধীরগতিতে চলেছে এবং আমি এর প্রতি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমি জানতাম এটি একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া এবং আমি ধৈর্য ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম।”
স্বাস্থ্য এবং সাফল্যের প্রতিফলন
বর্তমানে ক্যাথি বেটস তার ওজন কমানোর সফলতার ফলে অনেক বেশি এনার্জেটিক এবং কর্মক্ষম হয়ে উঠেছেন। তার ফিটনেস জার্নি তাকে নতুন করে জীবনের মান উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, “এখন আমি অনেক সহজেই হাঁটতে পারি, আমার কাজের সময় আর কোনো সমস্যা হয় না, এবং সবচেয়ে বড় কথা—আমি নিজেকে আত্মবিশ্বাসী এবং সুখী মনে করি।”
বেটসের এই যাত্রা প্রমাণ করে যে ধৈর্য, মনোযোগী খাদ্যাভ্যাস এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয় ধরে রাখলে, যে কেউই শারীরিক এবং মানসিক উন্নতি করতে পারে।