‘লজ্জার সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছেন’: স্বাতী মালিওয়াল কেজরিওয়ালের সমালোচনায়, আক্রমণের মামলা 'ভুয়া' বলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া

‘লজ্জার সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছেন’: স্বাতী মালিওয়াল কেজরিওয়ালের সমালোচনায়, আক্রমণের মামলা ‘ভুয়া’ বলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া

রাজনীতি

আম আদমি পার্টির (AAP) নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে তীব্রভাবে আক্রমণ করলেন রাজ্যসভা সদস্য এবং দিল্লি মহিলা কমিশনের (DCW) প্রাক্তন প্রধান স্বাতী মালিওয়াল। বৃহস্পতিবার, এক টুইটে মালিওয়াল কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন যে তিনি তার ঘনিষ্ঠ সহকারী বিবাভ কুমারের বিরুদ্ধে আনা আক্রমণের মামলাটিকে ‘ভুয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন।

মালিওয়ালের অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিবাভ কুমার, যিনি কেজরিওয়ালের বাসভবনে মালিওয়ালের উপর শারীরিক আক্রমণ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ১৩ মে, কেজরিওয়ালের সরকারি বাসভবনে এই আক্রমণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। গ্রেপ্তার হওয়ার পর কুমার প্রায় ১০০ দিনেরও বেশি সময় বিচারিক হেফাজতে ছিলেন এবং পরে সুপ্রিম কোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করে।

মালিওয়ালের তীব্র প্রতিক্রিয়া

টুইটারে মালিওয়াল লিখেছেন, “আপনি লজ্জার সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছেন। @ArvindKejriwal স্যার, যে গুন্ডাটি আপনার উপস্থিতিতে আমাকে আক্রমণ করেছিল, তাকে রক্ষার জন্য আপনি দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আইনজীবীদের একটি দল নিযুক্ত করেছেন। তার মুক্তির জন্য একের পর এক প্রেস কনফারেন্স করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।”

মালিওয়াল আরও উল্লেখ করেছেন যে, বিবাভ কুমার এখন জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তাকে দলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে বসানো হয়েছে। “আজ, যখন সে জামিনে মুক্ত, তাকে দলের সবচেয়ে বড় নেতা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে যে তাকে ভুয়া মামলায় জেলে রাখা হয়েছিল,” মালিওয়াল বলেন।

সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ

বিবাভ কুমারের জামিন সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে সম্ভব হয়েছিল। মামলার প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মালিওয়াল দাবি করেছিলেন যে কেজরিওয়ালের সামনেই তাকে আক্রমণ করা হয়েছিল। মালিওয়াল কেজরিওয়ালকে দোষারোপ করে বলেন, “আপনার উপস্থিতিতে আমাকে আক্রমণ করা হয়েছে এবং আপনি আমার বিরুদ্ধে মামলাটিকে ভুয়া হিসেবে দেখানোর জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।”

এছাড়াও, পড়ুন : কিভাবে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক প্রবণতাগুলি বছরের (2024 – 2031) জন্য উচ্চ-বর্তমান ফটোরিলে বাজারকে রূপ দিচ্ছে?

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের প্রতিক্রিয়া

এই ইস্যুতে কেজরিওয়াল সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে এখনও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে, AAP সূত্র জানিয়েছে যে দল বিবাভ কুমারের পক্ষে এবং মামলাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা হয়েছে বলে দাবি করছে। তাদের মতে, মালিওয়ালের অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন।

কেজরিওয়ালের ঘনিষ্ঠরা বলছেন যে, এই মামলাটি AAP ও তার নেতাদের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্রের অংশ, যা দলকে দুর্বল করার জন্য করা হয়েছে। AAP এর এক সিনিয়র নেতা বলেন, “মামলাটি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং রাজনীতিক প্রতিহিংসার শিকার। কুমারকে রাজনৈতিকভাবে লক্ষ্য করা হয়েছে।”

স্বাতী মালিওয়ালের অতীত কর্মকাণ্ড

স্বাতী মালিওয়াল একজন পরিচিত সমাজকর্মী এবং মহিলা অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন। দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান হিসেবে তার মেয়াদকালে তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যা নারীদের সুরক্ষা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়েছে। তবে, কেজরিওয়ালের সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন অত্যন্ত তিক্ত হয়ে উঠেছে, এবং মালিওয়াল অভিযোগ করছেন যে দলীয় স্বার্থে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক প্রভাব

এই মামলাটি দিল্লি এবং জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। একদিকে, AAP দলীয় কর্মীরা কুমারকে সমর্থন করছেন এবং মামলাটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে বিরোধীরা কেজরিওয়াল এবং AAP এর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিরোধী দলগুলি বলছে, কেজরিওয়ালের নির্লজ্জ আচরণ প্রমাণ করছে যে তিনি দলের স্বার্থে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, এমনকি মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়েও তিনি আপোস করতে পারেন।

আদালতের পর্যবেক্ষণ

মামলার শুনানির সময় আদালত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বিচারক উল্লেখ করেছেন যে মামলাটি তদন্তাধীন থাকলেও, বিবাভ কুমারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে আরও তথ্য প্রয়োজন। কুমারের জামিনের সময় আদালত জানিয়েছে যে এই মামলাটি তার নিরপেক্ষ বিচার করতে হবে এবং এটি রাজনৈতিক চাপে প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়।

এই ঘটনাটি কেজরিওয়াল এবং AAP এর উপর দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন মহিলাদের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কথা আসে।