বিহারের মানুষদের সমস্যাগুলি গভীরভাবে বোঝার লক্ষ্যে রাজ্যজুড়ে ভ্রমণ করে আলোচিত রাজনৈতিক কৌশলবিদ থেকে কর্মী প্রাশান্ত কিশোর অবশেষে বুধবার পাটনায় তার নতুন রাজনৈতিক দল ‘জন সুরাজ পার্টি’র আত্মপ্রকাশ ঘটালেন। বিহারের রাজধানী পাটনায় আয়োজিত এক বড় জমায়েতে কিশোর বিহারের জনগণের সমস্যাগুলিকে কেন্দ্র করে দলটির আদর্শ ও লক্ষ্য ব্যাখ্যা করেন।
জন সুরাজের উত্থান
‘জন সুরাজ’ মূলত একটি প্রচারাভিযান হিসেবে শুরু হয়েছিল। এই প্রচারাভিযানের আওতায় কিশোর বিহারের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁদের সমস্যা ও চাহিদাগুলি গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করেন। বিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে শহুরে এলাকাগুলিতে তাঁর সফর চলাকালীন, তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন, যা মূলত তাঁর নতুন দলের প্রাথমিক এজেন্ডা গঠন করেছে।
কিশোরের দাবি, “বিহারের কণ্ঠস্বর দিল্লিতে পৌঁছানো উচিত, এবং জন সুরাজ পার্টি সেই লক্ষ্যে কাজ করবে।” তিনি আরও বলেন, জন সুরাজ পার্টি বিহারের প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার এবং সুশাসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কিশোরের রাজনৈতিক যাত্রা
প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় রাজনৈতিক কৌশলবিদ হিসেবে, যেখানে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী কৌশল রচনা করে সফলতা অর্জন করেন। কিশোরের কৌশলগুলি বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্র প্রদেশ এবং বিহারে বড় সাফল্য এনে দিয়েছে। তবে, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের পর তিনি কৌশলবিদের ভূমিকা ছেড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরাসরি কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
কিশোর বলেছিলেন, তিনি রাজনীতিতে সরাসরি অংশ নেবেন এবং বিহারের মানুষের সমস্যা সমাধানে নিবেদিত হবেন। ‘জন সুরাজ’ নামে একটি জন-প্রচারাভিযান শুরু করে, তিনি বিহারের ৪০,০০০ কিমি ভ্রমণ করেন, যা এই অঞ্চলের বৃহত্তর সমস্যাগুলি তুলে ধরার জন্য একটি অনন্য উদ্যোগ হিসেবে পরিচিতি পায়। এই প্রচারাভিযানই শেষপর্যন্ত একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হলো।
জন সুরাজ পার্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
‘জন সুরাজ পার্টি’র মূল লক্ষ্য বিহারের সার্বিক উন্নয়ন এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন করা। বিহারের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে সমাধান করা দলটির প্রধান এজেন্ডা।
পাটনার জমায়েতে কিশোর বলেন, “জন সুরাজ দল বিহারের প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন পূরণের পথে কাজ করবে। এটা শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটা জনগণের দল।” তিনি আরও বলেন যে জন সুরাজ পার্টি জাতপাত, ধর্ম এবং অঞ্চলভিত্তিক বিভেদ থেকে মুক্ত থেকে বিহারের সব শ্রেণির মানুষকে নিয়ে একত্রে কাজ করবে।
জনসমর্থনের প্রতিচ্ছবি
কিশোরের এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে পাটনায় জমায়েত হওয়া জনতার ভিড় দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে কিশোরের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগকে বিহারের মানুষের মধ্যে যথেষ্ট সমর্থন এবং প্রত্যাশা রয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, বিশেষত যুবসমাজ এবং কৃষকরা, কিশোরের বক্তব্যের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। জমায়েত হওয়া জনতা কিশোরকে একজন নতুন প্রজন্মের নেতা হিসেবে অভিহিত করেছেন, যিনি বিহারের প্রকৃত সমস্যাগুলির দিকে নজর দিতে চান।
বিভিন্ন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রশান্ত কিশোরের দল বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন গতিবিধি আনতে পারে, বিশেষ করে এমন সময় যখন রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এছাড়াও, পড়ুন : Lambda Carrageenin মার্কেট
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
প্রশান্ত কিশোরের ‘জন সুরাজ পার্টি’র আত্মপ্রকাশের পর বিহারের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। কিছু রাজনৈতিক নেতা এই দলকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কিছু দল এই পদক্ষেপকে একজন রাজনৈতিক কৌশলবিদের নতুন প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
বিহারের একজন প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানান, “প্রশান্ত কিশোর একাধিক রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে সাফল্য এনে দিয়েছেন, কিন্তু এবার তিনি সরাসরি রাজনৈতিক ময়দানে নেমেছেন। এটা দেখার বিষয় হবে, তিনি কৌশলবিদ হিসেবে যে সাফল্য পেয়েছেন, তা তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে কতটা পুনরায় অর্জন করতে পারবেন।”
ভবিষ্যতের রূপরেখা
‘জন সুরাজ পার্টি’র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে প্রশান্ত কিশোর উল্লেখ করেন যে, আগামী কয়েক মাসে তারা বিহারের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে পড়বে এবং সেখানকার সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আগামী নির্বাচনেও তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং বিহারের জনগণের সমর্থন পেতে চেষ্টা করবে।