উত্তর প্রদেশের অমেঠিতে একটি দালিত স্কুল শিক্ষক, তার স্ত্রী এবং দুই কন্যার নির্মম হত্যার ঘটনায় পুলিশের দাবি, ঘটনাটি একটি ‘অনৈতিক সম্পর্কের পরিণাম’, যা শেষ পর্যন্ত মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়। শুক্রবার পুলিশের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ঘটনার বিবরণ
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত চন্দন ভার্মা এবং নিহত শিক্ষকের স্ত্রী পুনমের মধ্যে গত ১৮ মাস ধরে সম্পর্ক ছিল, যা পরবর্তীতে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে পৌঁছায়। এই সম্পর্কের কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, চন্দন ভার্মা পুনমের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে চাপের মধ্যে ছিলেন। পুলিশের বিবৃতিতে জানানো হয়, “ভার্মা স্বীকার করেছে যে, গত ১৮ মাস ধরে সে পুনমের সাথে সম্পর্ক ছিল। তবে সম্পর্কের মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যা তাকে মানসিকভাবে চাপের মধ্যে ফেলে। এই সমস্যাগুলির কারণে, সে পুনমের বাড়িতে যায় এবং কোনো একটি কারণে রেগে গিয়ে পুরো পরিবারকে গুলি করে হত্যা করে।”
কী ঘটেছিল সেই রাতে?
৩৫ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষক সুনীল কুমার, তার ৩২ বছর বয়সী স্ত্রী পুনম এবং তাদের দুই মেয়ে, অমেঠির অহরোয়া ভবানী এলাকায় তাদের নিজ বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পরিবারের সকল সদস্যদের গুলি করে হত্যা করার পর ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত পালিয়ে যায়।
অভিযুক্তের গ্রেফতারি
একদিন পর, শুক্রবার চন্দন ভার্মাকে নয়দার একটি টোল প্লাজার কাছ থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে দিল্লির দিকে পালানোর চেষ্টা করছিল। পুলিশের মতে, ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে তার গতিবিধির উপর নজরদারি চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। তদন্তের সময় পুলিশের হাতে তথ্য আসে যে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আগে থেকেই দলিত সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইন, ১৯৮৯-এর অধীনে একটি অভিযোগ দায়ের ছিল।
এছাড়াও, পড়ুন : মহাকাশ উপকরণ বাজারের আকার, বৃদ্ধি এবং পূর্বাভাস 2024-2030
অমেঠির পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্টের মতে, “আসামিকে শুক্রবার সকালে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার সময় অভিযুক্ত দিল্লিতে পালানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু পুলিশ তাকে একটি টোল প্লাজার কাছে ধরে ফেলে।” পুলিশের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত তার অপরাধ স্বীকার করেছে।
অন্যায়ের প্রতিশোধ দাবি
এদিকে, নিহত সুনীল কুমারের পরিবার অত্যন্ত মর্মাহত। তাদের দাবি, চন্দন ভার্মাকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। নিহত সুনীলের বাবার মতে, “আমার ছেলের হত্যাকারীকে তার অপরাধের জন্য একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমরা বিচার চাই।”
পরিবারের সদস্যদের দাবি, চন্দন ভার্মার সঙ্গে পুনমের সম্পর্ক নিয়ে আগে থেকেই সন্দেহ ছিল, কিন্তু বিষয়টি এতটা গুরুতর হয়ে উঠবে তা তারা ভাবতেও পারেননি। পুনমের বাবা-মাও মর্মাহত এবং তারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের দাবি তুলেছেন।
কী বলছে পুলিশ
পুলিশ তদন্তে আরও জানায়, ঘটনার আগে পুনম এবং চন্দনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল। এমনও প্রমাণ মিলেছে যে, সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে চন্দন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এর ফলস্বরূপ, সে ওই বাড়িতে এসে পুরো পরিবারকে গুলি করে হত্যা করে।
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে এসে দেহগুলো উদ্ধার করে এবং তদন্ত শুরু করে। ঘটনার সময় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি এখনও উদ্ধার করা যায়নি। তবে পুলিশের ধারণা, সেটি ঘটনার পর অভিযুক্ত ফেলে গেছে বা লুকিয়ে ফেলেছে।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড অমেঠি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতি শোক প্রকাশ করেছে এবং অবিলম্বে ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছে। তারা পুলিশের তদন্তের ওপর আস্থা রাখলেও, অনেকেই এই সম্পর্ক ভিত্তিক অপরাধের ঘটনাকে সামাজিক এবং নৈতিক অবক্ষয়ের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এলাকার সমাজকর্মীরা বলেন, “এ ধরনের ঘটনা সমাজের অবক্ষয়ের প্রতিফলন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে পুরো একটি পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে, যা মানবতার প্রতি চরম আঘাত।”
পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা দ্রুত তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দাখিল করবে এবং অভিযুক্তকে ন্যায়বিচারের মুখোমুখি করবে।
ফলো-আপ তদন্ত
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারণ জানার জন্য তারা পুনমের পরিবারের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তারা জানিয়েছে, অভিযুক্তের মানসিক অবস্থা এবং ঘটনার আগের দিন তার গতিবিধি নিয়ে আরও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
এই ঘটনা উত্তর প্রদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সম্পর্ক ভিত্তিক অপরাধের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলে এনেছে।