মুম্বই, ১২ অক্টোবর, ২০২৪: মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মুম্বই শহরে দশেরার দিনে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে শিবসেনার দুই শিবিরের মধ্যে শক্তিপ্রদর্শনের লড়াই। মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের শিবসেনা এবং উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা (ইউবিটি) উভয়ই আলাদা আলাদা স্থানে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছে। একদিকে শিন্ডের শিবির দক্ষিণ মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে সভা করতে চলেছে, অপরদিকে উদ্ধব ঠাকরের শিবির দাদারের ঐতিহাসিক শিবাজী পার্কে তাদের সমাবেশ আয়োজন করেছে।
শিবসেনার দুই শিবিরের মধ্যে এই লড়াইকে কেন্দ্র করে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে শিবসেনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, আর তারই প্রতিফলন দেখা যাবে এই দশেরার সভাগুলিতে। গত কয়েক মাস ধরে শিবসেনা বিভক্ত হয়ে রয়েছে দুই প্রধান শিবিরে। মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বিদ্রোহ করে নিজস্ব দল গঠন করেছেন, এবং উদ্ধব ঠাকরে শিবসেনা (ইউবিটি) শিবিরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
শক্তিপ্রদর্শন এবং জনসমাবেশ
শুক্রবার থেকে দুই শিবিরই তাদের সমাবেশের প্রস্তুতিতে নেমেছে। শিবসেনা (ইউবিটি) শিবিরের নেতা সঞ্জয় রাউত জানিয়েছেন, “যদিও বৃহস্পতিবার রাতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে শিবাজী পার্কে কিছুটা জলাবদ্ধতা হয়েছে, তবুও আমাদের সমাবেশ পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে।” শিন্ডের শিবির থেকে জানানো হয়েছে, আজাদ ময়দানে প্রায় ২ লক্ষ লোক সমবেত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শিন্ডের শিবির সমর্থকদের আনার জন্য প্রায় ৩,০০০ ব্যক্তিগত বাসের ব্যবস্থা করেছে, যা সমাবেশের আকার এবং গুরুত্বকে প্রতিফলিত করছে।
প্রাক-সমাবেশ প্রচার
উভয় শিবিরই সমাবেশের আগে নিজেদের প্রচারের জন্য বিভিন্ন টিজার ভিডিও প্রকাশ করেছে। শিন্ডের শিবিরের টিজারে শিবসেনার প্রতীকী বাঘটিকে কংগ্রেসের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখানো হয়েছে, এবং শিন্ডে সেই দড়ি কাটছেন। এটি শিন্ডের শিবিরের পক্ষ থেকে একটি রাজনৈতিক বার্তা যে তারা কংগ্রেসের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে নতুন শিবসেনার প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
অন্যদিকে, শিবসেনা (ইউবিটি) শিবিরের টিজারে মহারাষ্ট্রের গর্ব এবং শিবসেনার ঐতিহ্য রক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের টিজারে বিদ্রোহী বিধায়কদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। অনুমান করা হচ্ছে, উদ্ধব ঠাকরের বক্তব্যে বিজেপিকে নিশানা করা হবে এবং শিবসেনা ভাঙার জন্য তাদের দায়ী করা হবে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দৃষ্টিকোণ
মহারাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। শিবসেনা, যা একসময় মহারাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক দল ছিল, তা বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। ২০২২ সালে একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে শিবসেনার একটি অংশ বিদ্রোহ করে এবং মহারাষ্ট্রে বিজেপির সমর্থনে সরকার গঠন করে। এর ফলে উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর থেকেই শিবসেনার মূল দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে—একটি অংশ শিন্ডের অধীনে এবং অন্যটি উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে।
উভয় পক্ষই নিজেদের প্রকৃত শিবসেনা বলে দাবি করছে। শিন্ডের শিবির দাবি করছে যে তারা শিবসেনার মূল আদর্শ এবং বাল ঠাকরের শিক্ষাকে বজায় রেখেছে, যখন উদ্ধব ঠাকরের শিবির বলছে যে শিন্ডে এবং তার সহকর্মীরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং তারা শিবসেনার আসল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে।
দশেরার বিশেষ তাৎপর্য
দশেরা শিবসেনার জন্য ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিন। বাল ঠাকরে, যিনি শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, প্রতিবছর দশেরায় শিবাজী পার্কে সমাবেশ করতেন, যা দলটির জন্য একটি প্রতীকী অনুষ্ঠান ছিল। শিবসেনার এই ঐতিহ্য বজায় রেখেছে উদ্ধব ঠাকরের শিবির। শিন্ডের শিবিরও তাদের সমাবেশকে বড় আকারে আয়োজন করে দেখাতে চায় যে শিবসেনার প্রকৃত ক্ষমতা তাদের হাতেই আছে।
আজকের এই দশেরার সমাবেশে যে জনসমাবেশ হবে, তা পরবর্তী সময়ে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে শিবসেনার দুই শিবিরের শক্তি প্রদর্শনের ভিত্তি হতে পারে। সমাবেশে দলের নেতারা বক্তব্য রাখবেন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।
এছাড়াও, পড়ুন : ক্লথ ডায়াপারের বাজারের আকার 2.70% এর CAGR এ বাড়ছে, এই প্রতিবেদনটি 2024-2030 এর প্রকার, বিভাজন, বৃদ্ধি এবং পূর্বাভাস দ্বারা বিশ্লেষণ কভার করে
জনতার প্রতিক্রিয়া
মুম্বই শহরে জনমনে এই সমাবেশগুলিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিবসেনার দুই শিবিরের সমর্থকেরা তাদের নেতাদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত। একদিকে শিন্ডের সমর্থকেরা মনে করছে যে তাদের নেতা মহারাষ্ট্রের উন্নয়নের প্রতীক, এবং তার নেতৃত্বেই মহারাষ্ট্রে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠিত হবে। অন্যদিকে, উদ্ধব ঠাকরের সমর্থকেরা বিশ্বাস করে যে শিন্ডে এবং তার সহযোদ্ধারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং শিবসেনার প্রকৃত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শিবসেনার এই দ্বন্দ্ব পরবর্তী সময়ে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমীকরণকে জটিল করে তুলতে পারে। দশেরার মঞ্চে এই দুটি শিবিরের শক্তিপ্রদর্শন এবং এর প্রভাব আগামী কয়েক সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্ধারণ করবে।
মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে এই দশেরার সমাবেশগুলিকে ঘিরে উদ্দীপনা রয়েছে। শিবসেনার দুই শিবিরই নিজেদের প্রকৃত শিবসেনা হিসেবে তুলে ধরতে চায়, এবং উভয় পক্ষের সমাবেশ থেকেই স্পষ্ট বার্তা দেবে তারা।