মুম্বাইয়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাবা সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন সদস্যের গ্যাংয়ের অন্যতম অভিযুক্ত শিব কুমার গৌতমের সামাজিক মাধ্যমের কার্যকলাপ থেকে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচের গান্দারা গ্রামের এই যুবক গত কয়েক মাস ধরে নিজের “গ্যাংস্টার” পরিচয় সামাজিক মাধ্যমে গর্বভরে প্রদর্শন করে আসছিলেন।
জানা গেছে, শিব কুমার গৌতম গত কয়েক মাস ধরে ইনস্টাগ্রামের বিভিন্ন পোস্টে নিজের অপরাধী মানসিকতা প্রকাশ করছিলেন। ২৪ জুলাই একটি পোস্টে তিনি লেখেন, “ইয়ার তেরা গ্যাংস্টার হ্যায় জানি (তোমার বন্ধু একজন গ্যাংস্টার)”। ওই পোস্টের সঙ্গে একটি মোটরসাইকেলের উপর তার ছবি শেয়ার করা হয়।
শিব কুমার গৌতমের পূর্বে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই। তিনি মূলত উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ জেলার গান্দারা গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, শিব কুমার গৌতম মহারাষ্ট্রে গিয়ে পুনের একটি স্ক্র্যাপের দোকানে কাজ করছিলেন। সেখানে গিয়ে তার অপরাধমূলক কার্যক্রম শুরু হয়।
ইনস্টাগ্রামে পোস্ট: “শরিফ বাবা হ্যায়, কিন্তু আমি নই”
জুলাই মাসের আরেকটি পোস্টে গৌতম নিজেকে বাবার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “শরিফ বাবা হ্যায়, কিন্তু আমি নই।” এই পোস্টে তিনি আরও আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেন যা তার অপরাধী মানসিকতার স্পষ্ট প্রমাণ।
এছাড়াও, ২৬ মে তারিখে শিব কুমার গৌতম একটি শহরের স্কাইলাইনের ভিডিও পোস্ট করেন। সেই ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে “কেজিএফ” সিনেমার একটি ডায়লগ শোনা যায় যেখানে বলা হয়, “শক্তিশালী মানুষ জায়গাকে শক্তিশালী করে তোলে”। “কেজিএফ” একটি জনপ্রিয় সিনেমা যা একজন ভাড়াটে সৈনিকের জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।
গৌতমের এসব পোস্ট এবং মন্তব্য তার অপরাধী মানসিকতার প্রতিফলন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের মতে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সামাজিক মাধ্যমে নিজের অপরাধী সত্ত্বাকে বড় করে তুলছিলেন এবং নিজেকে এক ধরনের “গ্যাংস্টার” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
বাবাসিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত
শিব কুমার গৌতম মুম্বাইয়ের রাজনৈতিক নেতা বাবা সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে। গত জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন আরও দুইজন অপরাধী। তাদের মধ্যে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে, কিন্তু গৌতম এখনও পলাতক। মুম্বাই পুলিশ তার সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
তদন্তকারীদের মতে, এই হত্যাকাণ্ড একটি পরিকল্পিত অপরাধ এবং এর পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা জড়িত থাকতে পারে। গৌতম এবং তার সহযোগীরা বাবাসিদ্দিকীর উপরে আক্রমণ চালিয়ে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। হত্যার সময় তারা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে যা গৌতমের ইনস্টাগ্রামের পোস্টের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া গেছে।
সামাজিক মাধ্যমে গৌতমের অপরাধী অবস্থান
তদন্তকারীরা গৌতমের সামাজিক মাধ্যমের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করে দেখতে পেয়েছেন যে, তিনি প্রায়ই নিজের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে গর্ব করতেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে নিজের ছবির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ডায়লগ এবং পোস্ট শেয়ার করতেন যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে তিনি একজন অপরাধী হিসেবে পরিচিতি পেতে চাইছিলেন।
তদন্তকারী দল মনে করছে, গৌতমের এসব কার্যকলাপ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার পোস্টগুলো থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি নিজের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রচার চালাতেন এবং নিজেকে অপরাধী জগতে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইতেন।
পলাতক অভিযুক্তের সন্ধানে পুলিশ
মুম্বাই পুলিশ এখন গৌতমের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। যদিও তার কোনো নিশ্চিত অবস্থান এখনো জানা যায়নি, তবে পুলিশ জানিয়েছে, গৌতম মহারাষ্ট্র বা উত্তরপ্রদেশে কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে এবং তাকে ধরার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
মুম্বাই পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা গৌতমের সামাজিক মাধ্যমের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছি এবং তার অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। তার বিরুদ্ধে যে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, তা থেকে বোঝা যায় যে সে খুবই বিপজ্জনক এবং অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে।”
তদন্তকারী দল আরও জানিয়েছে যে, শিব কুমার গৌতমকে ধরার জন্য সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা ব্যবহার করা হচ্ছে এবং খুব শিগগিরই তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছে।
বাবাসিদ্দিকী হত্যা: রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বাবাসিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ড মুম্বাইয়ের রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তিনি একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তার এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যোগসূত্র রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মুম্বাইয়ের স্থানীয় রাজনীতি এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক স্বার্থের সংঘাতের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মুম্বাইয়ের পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ উদঘাটনে কাজ করছে এবং সব ধরনের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে মামলার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তবে গৌতমের সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট এবং মন্তব্যগুলো হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে নতুন আলো ফেলেছে।