মুম্বাই পুলিশ বুধবার ছত্তিশগড়ের একজন কিশোরকে গ্রেফতার করেছে যিনি অন্তত তিনটি বিমানকে ভুয়া বোমা হুমকি দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় নাগরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু এই কিশোরের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বোমা হুমকি দিয়েছিলেন। মুম্বাই পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে যে এই হুমকিগুলো ছত্তিশগড়ের এক কিশোরের নামে করা হয়েছে। ওই কিশোরকে আটক করা হয়েছে এবং তাকে স্থানীয় কিশোর ন্যায়বিচার বোর্ডে সোপর্দ করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ:
মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, কিশোরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এই হুমকিগুলো দিয়েছিল। এই অ্যাকাউন্টটি সে তার বন্ধুর নাম ব্যবহার করে তৈরি করেছিল। তার বন্ধুর সাথে অর্থ নিয়ে বিরোধের কারণে সে এই পরিকল্পনা করে এবং বন্ধুকে ফাঁসানোর জন্যই এমন ভুয়া হুমকি দিয়েছিল। এই ঘটনায় মূল উদ্দেশ্য ছিল বন্ধুর ওপর প্রতিশোধ নেওয়া।
কিশোরটি ছত্তিশগড়ের রাজনন্দগাঁওয়ের বাসিন্দা এবং জানা গেছে যে, সে একটি স্কুল থেকে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল। এনডিটিভি সূত্রে জানা গেছে, কিশোরের বয়স ১৭ বছর এবং সে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে তার বন্ধুর নামে ভুয়া হুমকি পোস্ট করে।
বোমা হুমকি এবং তার পরিণতি:
গত তিন দিনে ১৯টি ফ্লাইটে বোমা হুমকি এসেছে। এর মধ্যে একটি ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের বিমানও রয়েছে, যা ইন্টারগ্লোব এভিয়েশন লিমিটেডের একটি ইউনিট। আরেকটি হুমকি এসেছে এয়ার ইন্ডিয়া লিমিটেডের বিমানের বিরুদ্ধে। এই হুমকিগুলির ফলে বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর এবং বিমান সংস্থার মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয় এবং বিমানগুলি পরীক্ষা করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত, কোনও বিস্ফোরক বা ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায়নি।
বিমান সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছে যে, তারা সবসময় নিরাপত্তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকে। এ ধরণের হুমকি প্রায়ই তাদের কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটায় এবং যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তবে তাদের নিরাপত্তা বিভাগ সব সময় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বিষয়গুলো সমাধান করার চেষ্টা করে।
মুম্বাই পুলিশের প্রতিক্রিয়া:
মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে যে, তারা কিশোরটিকে আটকের পর আরও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ আরও জানায় যে, “আমরা অন্যান্য দায়ী ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করতে কাজ করছি যারা এই ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। তাদের সকলকে উপযুক্ত আইনি প্রক্রিয়ায় আনা হবে।” পুলিশ আরও নিশ্চিত করেছে যে, এই ধরনের অপরাধগুলি সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় নাগরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু বলেছেন, “মুম্বাই পুলিশ একজন কিশোরকে গ্রেফতার করেছে, যিনি তিনটি বিমানের বিরুদ্ধে বোমা হুমকি দিয়েছিলেন। অন্য যারা এই ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে তাদেরও শনাক্ত করা হবে এবং আইনানুগ শাস্তি প্রদান করা হবে।”
কিশোরের পরিবার ও সমাজের প্রতিক্রিয়া:
কিশোরের পরিবার এবং স্থানীয় সমাজের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কিশোরের বাবা-মা বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত মর্মাহত এবং তারা এই ঘটনায় হতবাক হয়েছেন। তারা বলেছেন, তাদের ছেলে এমন কাজ করেছে তা তাদের কখনও কল্পনাতেও ছিল না। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন এবং আইন অনুযায়ী বিচার হওয়া উচিত।
স্থানীয় সমাজের ব্যক্তিরা জানিয়েছেন যে, তারা এমন ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং আশা করছেন যে এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেছেন যে, এই ধরনের ঘটনা শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
এ ধরনের ঘটনা সমাজে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়ে। মুম্বাই পুলিশ এবং কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে কিশোরটি শনাক্ত করে আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে এবং অন্যান্য দায়ী ব্যক্তিদেরও শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে।
সামাজিক মাধ্যমের গুরুত্ব:
এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া ভুয়া তথ্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। কিশোরের মতো অনেকেই নানা কারণে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়ায়, যা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই এ ধরনের অপরাধ দমন করতে এবং সচেতনতা বাড়াতে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।