আসামের দিমা হাসাও জেলার দিবারোলং স্টেশনে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় একটি গুরুতর রেল দুর্ঘটনা ঘটে। আগরতলা-লোকমান্য তিলক টার্মিনাস এক্সপ্রেসের অন্তত ৮টি কোচ লাইনচ্যুত হয়, তবে সৌভাগ্যক্রমে, এই ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার বিবরণ
নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের লুমডিং-বদরপুর হিল শাখার অন্তর্গত লুমডিং বিভাগের দিবারোলং স্টেশনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। লাইনচ্যুত হওয়া কোচগুলির মধ্যে পাওয়ার কার ও ইঞ্জিনও ছিল। নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের জনসংযোগ আধিকারিক (সিপিআরও) জানিয়েছেন, “ট্রেনটির মোট আটটি কোচ লাইনচ্যুত হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর নেই এবং গুরুতর আঘাতেরও তথ্য পাওয়া যায়নি।”
ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই রেলওয়ে এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু হয়। লুমডিং বিভাগ থেকে উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় এবং লাইনচ্যুত কোচগুলির যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে। স্থানীয় রেলওয়ে আধিকারিকদের মতে, এই দুর্ঘটনায় যে আশঙ্কাজনক ক্ষতি হতে পারত, তা সুষ্ঠু সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে এড়ানো গেছে।
যাত্রীদের নিরাপত্তা
দুর্ঘটনার সময় ট্রেনে থাকা বেশ কিছু যাত্রী ছোটখাটো আঘাত পান বলে জানা গেছে। তাদের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়। স্থানীয় হাসপাতাল ও মেডিকেল টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল জরুরি চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য। যাত্রীদের আতঙ্ক কাটানোর জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের পাশে থেকে সহায়তা প্রদান করে।
একজন যাত্রী জানান, “হঠাৎ করে ট্রেনটি ঝাঁকুনি দিতে শুরু করে, এবং আমরা অনুভব করি যে কোচটি হঠাৎ লাইনচ্যুত হয়ে গেছে। প্রথমে ভয় পেলেও আমাদের নিরাপদে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং কোনও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।”
রেল পরিষেবা ব্যাহত
দুর্ঘটনার পরপরই ওই রুটে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। লুমডিং-বদরপুর শাখার অন্যান্য ট্রেন পরিষেবাগুলিও সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঘটনার পর দ্রুতগতিতে ট্র্যাক মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে, এবং দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
তদন্ত প্রক্রিয়া
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে যে ট্র্যাকের কোনও ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তবে চূড়ান্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কোন স্পষ্ট কারণ বলা সম্ভব নয়। রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
অতিরিক্ত তথ্য
আগরতলা-লোকমান্য তিলক এক্সপ্রেস একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন যা উত্তর-পূর্ব ভারতের আগরতলা থেকে মহারাষ্ট্রের মুম্বাই পর্যন্ত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে। এই ট্রেনে প্রতিদিন শত শত যাত্রী যাতায়াত করেন, এবং এই ধরনের দুর্ঘটনা রেল যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে যে তারা যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
রেলওয়ের প্রতিক্রিয়া
নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ট্রেন চলাচলের সময় যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। রেলওয়ে আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে, “রেল চলাচলের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সংস্থাগুলির ভূমিকা
উদ্ধার কাজ এবং ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলওয়ে, স্থানীয় প্রশাসন এবং অন্যান্য সংস্থাগুলি একযোগে কাজ করেছে। উদ্ধার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত কোচগুলি পুনরুদ্ধার করে ট্র্যাক পরিষ্কার করা হবে।
এই ঘটনা রেল পরিষেবা ব্যবস্থায় আরও উন্নতির প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত দেয় এবং রেল মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।