বিহারের সারন এবং সিওয়ান জেলায় হুচ (নকল মদ) সেবনের ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বৃহস্পতিবার বেড়ে ২৫-এ দাঁড়িয়েছে, এবং আরও মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। এই ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মিথাইল অ্যালকোহল এবং শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত স্পিরিট মিশিয়ে এই মদ তৈরি করা হয়েছিল, যা সেবনের ফলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
ঘটনা বিবরণ
বিহারের সিওয়ান ও সারন জেলার বিভিন্ন গ্রামে বিষাক্ত মদ সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েক ডজন মানুষ। অসুস্থদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, যাদের মধ্যে কিছুজনের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই মদ সেবনের পর তাদের মধ্যে মাথাব্যথা, বমি এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। বেশিরভাগ মৃত্যুই এই উপসর্গ থেকে শুরু হয়, পরে রোগীদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়ে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মদে মিথাইল অ্যালকোহল, যা অত্যন্ত বিষাক্ত, তা ব্যবহার করা হয়েছিল। মিথাইল অ্যালকোহল সাধারণত শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, এবং এটি সেবন করলে মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের হুচ মদ উৎপাদন অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।
প্রশাসনিক পদক্ষেপ
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এই ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়েছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে রাজ্যের ডিজিপি আলোক রাজ এবং মদ নিষেধাজ্ঞা ও আবগারি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী শীর্ষ কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং ঘটনার প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনার পরই দুটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করা হয়েছে। একটি স্থানীয় স্তরে অপরাধমূলক কার্যকলাপ খতিয়ে দেখছে এবং দোষীদের শনাক্ত করার জন্য কাজ করছে। আর একটি এসআইটি পাটনার মদ নিষেধাজ্ঞা বিভাগ দ্বারা গঠন করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিককালে ঘটেছে এমন সবকটি হুচ মদ সংক্রান্ত ঘটনার উপর একটি বিস্তারিত সমীক্ষা চালাবে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিহারের মদ নিষেধাজ্ঞা নীতির বিরুদ্ধে বিরোধীরা কড়া আক্রমণ চালাচ্ছে। তারা অভিযোগ করেছে, মদ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাজ্যে নকল মদের কারবার বন্ধ করা যায়নি এবং এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। বিরোধী দলের নেতারা মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারকে মদ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছেন এবং এই ধরনের মৃত্যুর জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন।
বিজেপি এবং আরজেডি নেতারা জানান, মদ নিষেধাজ্ঞা শুধু কাগজে-কলমেই আছে, বাস্তবে এর কার্যকারিতা নেই। রাজ্যের বেশ কিছু অংশে অবৈধ মদ তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে, এবং প্রশাসনের নজরদারির অভাবে তা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পূর্ববর্তী ঘটনা
বিহারে মদ নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নকল মদ সেবনের ফলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালে নীতিশ কুমারের সরকার মদ নিষিদ্ধ করার পর থেকে রাজ্যে প্রায়শই হুচ মদ সেবনের ফলে মৃত্যু ঘটে। তবে এই ধরনের ঘটনা নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা বরাবরই আক্রমণ চালিয়ে আসছে। তাদের অভিযোগ, মদ নিষেধাজ্ঞার নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে, অথচ অবৈধ মদ কারবার অবাধে চলছে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা
এই ঘটনায় যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাদের স্থানীয় হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, মদ সেবনের পর বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু করা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর স্থানীয় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। হুচ মদ সেবনের ফলে এমন ঘটনা বারবার ঘটতে থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় এবং আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গ্রামবাসীরা জানান, এই ধরনের অবৈধ মদ ব্যবসার বিরুদ্ধে তারা বহুদিন ধরেই অভিযোগ জানাচ্ছেন, কিন্তু প্রশাসন কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
প্রশাসনিক নজরদারি ও নিষেধাজ্ঞা
রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ হলেও অবৈধভাবে মদ বিক্রি এবং উৎপাদন বন্ধ করতে প্রশাসনের ব্যর্থতা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে। মদ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য প্রশাসন একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও হুচ মদ তৈরি ও বিক্রি বন্ধ করা যাচ্ছে না।
এই ঘটনা রাজ্যের মদ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে তা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে গভীর কৌতূহল রয়েছে।