সাইক্লোন ডানা: ২০০-র বেশি ট্রেন বাতিল, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে সতর্কতা; উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি

top news

সাইক্লোন ডানা ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধেয়ে আসছে, যার প্রভাব ইতিমধ্যেই উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে। ভারতের আবহাওয়া দফতর (IMD) জানিয়েছে, সাইক্লোনটি আগামী ২৫ অক্টোবর ভোরের দিকে ওড়িশার ভিটারকণিকা ন্যাশনাল পার্ক এবং ধামরা পোর্টের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আছড়ে পড়বে। সর্বোচ্চ ১২০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ঝড়ো হাওয়া এবং ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা দুই রাজ্যেই প্রশাসন তৎপর হয়েছে।

ওড়িশায় ব্যাপক প্রস্তুতি

ওড়িশা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৩০ শতাংশ বা ৩-৪ লক্ষ মানুষকে ইতিমধ্যেই উপকূলীয় বিপজ্জনক অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি বলেছেন, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই উদ্ধার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর এই সাইক্লোন মোকাবিলায় একযোগে কাজ করছে, যাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়।

বালেশ্বর, কেন্দ্রাপাড়া, জাজপুর ও ভদ্রক জেলা সাইক্লোনের সর্বাধিক প্রভাবের আওতায় রয়েছে। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পাশাপাশি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) এবং ওড়িশা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (ODRAF)-এর বিশেষ টিমগুলি মোতায়েন করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে সতর্ক সংকেত বাজানো হয়েছে এবং মৎস্যজীবীদের সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে।

পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলাতেও এই সাইক্লোনের প্রভাব পড়তে চলেছে। কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া এবং হুগলিতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই ১.১৪ লক্ষ মানুষকে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাজ্য সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ, পুলিশ, দমকল, এবং অন্যান্য সরকারি দফতর সমন্বয় করে কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন এবং প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা হাসপাতালগুলোতেও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে কলকাতা শহর ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে, তাই সেখানে পাম্পিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এছাড়াও, পড়ুন : ই নাকের বাজারের আকার 7.40% এর CAGR এ বাড়ছে, এই প্রতিবেদনটি 2024-2030 এর ধরন, বিভাজন, বৃদ্ধি এবং পূর্বাভাস দ্বারা বিশ্লেষণ কভার করে

ট্রেন ও বিমান পরিষেবা ব্যাহত

সাইক্লোন ডানার কারণে পূর্ব রেল ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে আগামী ২৪ ও ২৫ অক্টোবরের জন্য ২০০টিরও বেশি ট্রেন বাতিল করেছে। বালেশ্বর, খড়্গপুর, হাওড়া সহ পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রুটে ট্রেন পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। এছাড়া, কলকাতা বিমানবন্দর থেকে কয়েকটি বিমানও স্থগিত করা হয়েছে।

এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বিমান সংস্থাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে এবং যাত্রীদের বিমানবন্দরের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীরা বিমানের নির্দিষ্ট সময়সূচি সম্পর্কে আগে থেকেই যোগাযোগ করে নিতে বলা হয়েছে।

জরুরি সতর্কতা ও উদ্ধার ব্যবস্থা

সরকারি সূত্রের খবর অনুযায়ী, উপকূলীয় অঞ্চলগুলির স্কুল-কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে খাদ্য ও পানীয় জল মজুত করা হয়েছে এবং চিকিৎসা সহায়তার জন্য বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং যোগাযোগ বিভাগকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, কারণ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব জানান, সমস্ত জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে যাতে জরুরি অবস্থায় সমুদ্রপথে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।

সাইক্লোনের গতিপথ ও প্রভাব

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সাইক্লোন ডানা পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের ওপর তৈরি হয়েছে এবং ধীরে ধীরে তা ওড়িশার উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপাতত ১০০ থেকে ১২০ কিমি গতিবেগে ঝড়ো হাওয়া বইছে এবং সঙ্গে রয়েছে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত। কলকাতা শহরেও বৃহস্পতিবার থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে যাদের বাড়িঘর কাঁচা বা সুরক্ষিত নয়, তাদের অবিলম্বে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে কোনো গুজব বা ভুয়া খবর না ছড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে এবং সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।

সতর্কবার্তা

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রের উত্তাল অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং যারা এখনও গভীর সমুদ্রে রয়েছে তাদের দ্রুত ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে ২০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সাইক্লোনটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বা শুক্রবার ভোরে ওড়িশার উপকূলে আছড়ে পড়বে।