কাশ্মীরের গান্দেরবাল ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলায় ৭ জন নিহত: সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব

top news

গান্দেরবাল, জম্মু ও কাশ্মীর – ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় কাশ্মীরের গান্দেরবাল জেলার একটি শ্রমিক ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়া ফুটেজ অনুযায়ী, দুই সন্ত্রাসী আমেরিকান তৈরি এম৪ কারবাইন এবং রাশিয়ান একে-৪৭ রাইফেল হাতে ক্যাম্পে ঢুকে হামলা চালায়। হামলার শিকারদের মধ্যে একজন স্থানীয় চিকিৎসক এবং ছয়জন ক্যাম্পের শ্রমিক ছিলেন, যারা উপত্যকার বাইরে থেকে এসেছিলেন এবং জেড-মোর সুড়ঙ্গ নির্মাণে কাজ করছিলেন।

হামলা ঘটে সন্ধ্যা ৭:২৫ নাগাদ, যখন ক্যাম্পের কর্মচারীরা ডাইনিং এলাকায় একত্রিত হচ্ছিলেন বা কেউ কেউ রাতের খাবারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হামলাটি ক্যাম্পের একটি ডাইনিং হলে শুরু হয়, যা জেড-মোর টানেলের একটি রাস্তাঘাটের কাছে, পাহাড় ও শ্রীনগর-লেহ জাতীয় সড়কের মাঝখানে অবস্থিত।

সন্ত্রাসী হামলার বিশদ বিবরণ

ক্যাম্পের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে যে সন্ত্রাসীরা প্রায় সাত মিনিট ধরে ক্যাম্পে ছিল এবং অতি নিষ্ঠুরভাবে সেখানকার শ্রমিকদের উপর গুলি চালায়। প্রথমে তারা ডাইনিং হল লক্ষ্য করে গুলি চালায়, তারপর বাইরে বেরিয়ে অন্যান্য কর্মীদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়। ক্যাম্পের একাংশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না, ফলে প্রথম আক্রমণস্থল সঠিকভাবে ধরা পড়েনি। তবে, পরবর্তী অংশে সিসিটিভি ফুটেজে তাদের চলাফেরা এবং গুলি চালানোর দৃশ্য পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে।

সূত্রমতে, সন্ত্রাসীরা ডাইনিং হলে প্রবেশ করে গুলি চালানোর পর ক্যাম্পের মেস এলাকায় গিয়েও আক্রমণ চালায়। তারা সেখানকার কর্মচারীদের লক্ষ্য করে তীব্র গুলি বর্ষণ করে, যার ফলে সাতজন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।

নিহতদের পরিচয়

নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন কাশ্মীরের বুদগামের বাসিন্দা এবং পেশায় একজন চিকিৎসক। বাকি ছয়জন কর্মী উপত্যকার বাইরে থেকে এসেছিলেন এবং তারা এপিসিও ইনফ্রাটেক নামে একটি কোম্পানির অধীনে কাজ করছিলেন। এই কোম্পানি জেড-মোর সুড়ঙ্গের নির্মাণ কাজে জড়িত। সুড়ঙ্গটি শ্রীনগর-সোনমার্গ মহাসড়কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন নির্মাণ শ্রমিক, যারা টানেল নির্মাণ কাজ করছিলেন।

তদন্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

হামলার পরপরই, জম্মু ও কাশ্মীরের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা, জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) কর্মকর্তা এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেন। ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে তারা হামলার বিবরণ সংগ্রহ করছেন এবং হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।

একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “হামলার প্রথম অংশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। তবে, পরবর্তী অংশে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায় সন্ত্রাসীরা কিভাবে ক্যাম্পে প্রবেশ করে এবং তাদের কার্যকলাপ চালায়।”

সন্ত্রাসীদের সন্ধান

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ধরতে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা হামলাস্থলের চারপাশে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছেন এবং গোটা এলাকা সুরক্ষিত করতে তৎপর রয়েছেন।

স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন কঠোরভাবে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং নিহতদের পরিবারদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছে। একজন সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, “এই ধরনের হামলা কাশ্মীরের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করার চেষ্টা। আমরা দোষীদের ধরতে এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর।”

জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) ভূমিকা

জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) ইতিমধ্যেই এই হামলার তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এবং তারা সম্ভাব্য সব প্রমাণ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে। সন্ত্রাসীদের পেছনের মদতদাতা কারা এবং কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই হামলার সাথে জড়িত, তা খুঁজে বের করার জন্য এনআইএ জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

এছাড়াও, পড়ুন : অপটোইলেক্ট্রনিক সুইচের বাজারের আকার 5.60% এর CAGR-এ বাড়ছে, এই প্রতিবেদনটি 2024-2030 টাইপ, বিভাজন, বৃদ্ধি এবং পূর্বাভাস দ্বারা বিশ্লেষণ কভার করে

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা

কাশ্মীরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে কাশ্মীর উপত্যকার বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারী এবং শ্রমিকদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব হামলার পেছনে মূলত বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাত রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ

এই ঘটনায় কাশ্মীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে এবং রাজ্যজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। হামলার পর থেকে পুরো গান্দেরবাল জেলা এবং সংলগ্ন এলাকায় উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনী সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে দ্রুত তথ্য জানাতে আহ্বান জানিয়েছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত

এখনও পর্যন্ত হামলাকারীরা গ্রেপ্তার হয়নি এবং তাদের সন্ধানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের আটক করতে সম্ভাব্য সব উপায় ব্যবহার করছে।