আরজি কর হত্যাকাণ্ড: মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেন পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ৪৮ জন সিনিয়র চিকিৎসকের পদত্যাগ, অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের সমর্থনে পদক্ষেপ

top news

কলকাতা: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৪৮ জন সিনিয়র চিকিৎসক ও অধ্যাপক মঙ্গলবার তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, যা রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পদক্ষেপের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে জুনিয়র চিকিৎসকদের চলমান অনশন এবং তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের উদাসীনতা।

জুনিয়র চিকিৎসকরা গত দুই মাস ধরে বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন এবং শনিবার থেকে তারা অনির্দিষ্টকালীন অনশন শুরু করেছেন। তাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার তাদের দশটি প্রধান দাবির বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এসব দাবির মধ্যে অন্যতম হলো, রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজগুলিতে নিরাপত্তা বৃদ্ধির ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন।

সিনিয়র চিকিৎসকরা পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানিয়েছেন, জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটছে এবং তাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানো প্রয়োজন ছিল। “জুনিয়র চিকিৎসকরা আমাদের সন্তানের মতো। আমরা বসে বসে তাদের এই পরিস্থিতির মধ্যে দেখতে পারি না। তাই আমরা একত্রে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” বলেছেন আরজি কর হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. দেবব্রত দাস।

অনশন ও এর প্রভাব

শনিবার রাত থেকে অন্তত সাতজন জুনিয়র চিকিৎসক অনশন শুরু করেছেন, যাদের মধ্যে একজন আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসকও রয়েছেন। তাদের দাবিগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো। চিকিৎসকদের দাবি, হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং আক্রমণের ঘটনার পরও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ডা. দাস আরও বলেন, “গত দুই মাস ধরে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছে, কিন্তু কোনো ফল আসছে না। জুনিয়র চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখন দ্রুত খারাপ হচ্ছে। তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে, তাই আমরা আর বসে থাকতে পারি না।”

প্রশাসনিক স্তরে আলোচনার উদ্যোগ

রাজ্যের মুখ্য সচিব মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য সচিবের সাথে জরুরি বৈঠক করতে পারেন বলে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের বিষয়ে সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি, তবে প্রশাসনিক মহলে এই পদক্ষেপ যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।

 এছাড়াও, পড়ুন : প্যাকেজিং টেস্টিং পরিষেবা বাজার বেগ

৪৮ জন সিনিয়র চিকিৎসকের পদত্যাগ

মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ৪৮ জন সিনিয়র চিকিৎসক। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবিগুলি ন্যায্য এবং তাদের প্রতি সমর্থন জানাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, তাদের পদত্যাগ শুধু একটি সমর্থন নয়, এটি সরকারের প্রতি এক ধরনের প্রতিবাদও।

ডা. দেবব্রত দাস আরও বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে যুক্ত আছি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের বসে থাকা সম্ভব নয়। আমরা সকলেই একমত হয়েছি যে, জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতি আমাদের সমর্থন জানানো দরকার।”

জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি

জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন এবং সিনিয়র চিকিৎসকদের পদত্যাগের ফলে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আরজি কর হাসপাতালসহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে কয়েকজনের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ার কথা জানা গেছে, তবে তাদের এখনও কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।

অনশনকারীদের মধ্যে একজন চিকিৎসক বলেন, “আমরা আমাদের ন্যায্য দাবির জন্য লড়াই করছি। তবে আমাদের কথা কেউ শুনছে না। আমাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, কিন্তু আমরা পিছপা হব না।”

সরকারের নিরবতা নিয়ে প্রশ্ন

সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সুস্পষ্ট প্রতিক্রিয়া আসেনি, যা চিকিৎসক সমাজের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়েছে। আন্দোলনরত চিকিৎসকরা এবং তাদের সমর্থকরা মনে করছেন, এই নিরবতা আসলে সমস্যার সমাধানে সরকারের অনীহা প্রদর্শন করছে। জুনিয়র চিকিৎসকরা বারবার দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে তাদের সাথে আলোচনায় বসা হোক এবং তাদের দাবিগুলি পূরণ করা হোক।

অন্যদিকে, সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য সচিবের মধ্যে বৈঠকের পর কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নির্ভর করছে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের উপর। তবে জুনিয়র এবং সিনিয়র চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

 এছাড়াও, পড়ুন : গ্লোবাল রিয়ারভিউ মিরর চিপ মার্কেটের আকার 2023 সালে USD 720.00 মিলিয়ন ছিল, এই প্রতিবেদনটি বাজারের বৃদ্ধি, প্রবণতা, সুযোগ এবং পূর্বাভাস 2024-2030 কভার করে

স্বাস্থ্য খাতের সংকট

এই আন্দোলন এবং পদত্যাগের ঘটনাটি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর এক গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগী ভর্তি এবং চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। আরজি কর হাসপাতালের মতো বৃহত্তম মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালগুলিতে যদি চিকিৎসক সংকট তৈরি হয়, তবে তা সাধারণ মানুষের চিকিৎসার সুযোগ সংকুচিত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অবশেষে, রাজ্য সরকারের সামনে এখন এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সংকট মোকাবিলা করা।