প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার রেলওয়ের ১১.৭২ লাখেরও বেশি কর্মচারীর জন্য ৭৮ দিনের পারফরম্যান্স-লিঙ্কড বোনাস (পিএলবি) অনুমোদন করেছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২,০২৮.৫৭ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এই ঘোষণা করেন, যা ট্র্যাক মেনটেইনার, লোকো পাইলট, স্টেশন মাস্টার, সুপারভাইজার এবং টেকনিশিয়ানদের মতো বিভিন্ন বিভাগের রেল কর্মীদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করবে।
প্রতি বছর রেলের কর্মচারীদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া হয়ে থাকে। এটি মূলত দুর্গাপূজা ও দশেরা উৎসবের আগে বিতরণ করা হয়। এবারের বোনাস ৭৮ দিনের মজুরির সমান হবে, যা মূলত রেল কর্মীদের জন্য কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রণোদনার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, প্রতিটি কর্মচারীর সর্বোচ্চ প্রাপ্য বোনাসের পরিমাণ হতে পারে ₹১৭,৯৫১ টাকা।
এই সিদ্ধান্ত রেল কর্মচারীদের মধ্যে একটি স্বস্তির বার্তা হিসেবে এসেছে, তবে রেল ইউনিয়নগুলির একাংশ এতে সন্তুষ্ট নয়। রেল কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন, বিশেষ করে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ফেডারেশন (আইআরইএফ) এবং ইন্ডিয়ান রেলওয়ে সিগনাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন মেনটেইনার্স ইউনিয়ন (আইআরএসটিএমইউ), সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। তাদের দাবি, বর্তমান বোনাসের হিসাব ছয় নম্বর বেতন কমিশনের ভিত্তিতে করা হয়েছে, যা সঠিক নয়। তারা বলছে, সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বোনাস দেওয়া উচিত ছিল।
ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, বর্তমান বোনাসের কাঠামো কর্মচারীদের প্রকৃত মজুরির প্রতিফলন ঘটায় না। তারা মনে করে, কর্মচারীদের বর্তমান আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন বেতন কমিশন অনুসারে বোনাস দেওয়া প্রয়োজন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।
রেল কর্মীদের জন্য বোনাসের পরিমাণ:
রেল মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই বোনাস মূলত ট্র্যাক মেনটেইনার, লোকো পাইলট, ট্রেন ম্যানেজার (গার্ড), স্টেশন মাস্টার, পয়েন্টসম্যান এবং অন্যান্য কারিগরি ও প্রশাসনিক কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। বোনাস প্রাপ্য এই কর্মীরা মূলত গেজেটেড ক্যাটাগরির বাইরের কর্মচারী। এই উদ্যোগ রেলের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রক।
এছাড়াও, পড়ুন : নান্দনিক ডিভাইসের বাজার: যেখানে সৌন্দর্য মেশিনের সাথে মিলিত হয়
রেল ইউনিয়নগুলির ক্ষোভ:
রেল কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন বিশেষ করে আইআরইএফ এবং আইআরএসটিএমইউ এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, বোনাসের পরিমাণ এবং এর ভিত্তি ঠিকমতো মূল্যায়ন করা হয়নি। তারা বলছেন, সপ্তম পে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বোনাসের হিসাব করা হলে, কর্মচারীরা বর্তমানের তুলনায় আরো বেশি বোনাস পেতেন।
আইআরইএফ এর এক নেতা জানান, “বর্তমান বোনাসের ভিত্তি পুরনো মজুরির ওপর নির্ভর করছে। বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি ও মুদ্রাস্ফীতির চাপকে উপেক্ষা করা হয়েছে। আমরা চাই নতুন কমিশনের ভিত্তিতে কর্মচারীরা তাদের ন্যায্য প্রাপ্যটি পান।”
আইআরএসটিএমইউ এর সভাপতি বলেন, “রেলের কর্মচারীরা দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন হওয়া উচিত। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যাতে নতুন পদ্ধতির ভিত্তিতে বোনাস প্রদান করা হয়।”
রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা:
ভারতীয় রেলওয়ে দেশের বৃহত্তম কর্মসংস্থান সংস্থাগুলির একটি, যেখানে লক্ষ লক্ষ কর্মচারী কাজ করে। রেল কর্মচারীরা দিনরাত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাত্রী এবং মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করেন। রেলওয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। প্রতি বছর এই কর্মীদের জন্য উৎসবের আগে বোনাস ঘোষণা করা হয়, যা একটি রীতি হিসেবে পরিণত হয়েছে।
এই বোনাস কর্মচারীদের মধ্যে উৎসাহ বাড়ায় এবং উৎসবের আনন্দে যোগ করে। তবে এই বছর ইউনিয়নগুলির দাবি পরিস্থিতিকে অন্য দিকে নিয়ে যেতে পারে। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করেছে, যা আগামী দিনে আন্দোলনের রূপ নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, রেল কর্মীদের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে এই বোনাস ঘোষণা করা হয়েছে। রেলওয়ের কর্মদক্ষতা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য কর্মীরা যে কঠোর পরিশ্রম করে, তা প্রশংসার যোগ্য।
তবে, ইউনিয়নগুলির দাবি কিভাবে সরকার মেটাবে এবং আগামী দিনে এই পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা এখন দেখার বিষয়।