দিল্লির মেয়র সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন এমসিডি স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচনের ইস্যুতে

দিল্লির মেয়র সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন এমসিডি স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচনের ইস্যুতে

top news

দিল্লির মেয়র শেলি ওবেরয় রবিবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের (এমসিডি) স্থায়ী কমিটির ষষ্ঠ সদস্যের নির্বাচন নিয়ে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) শেষ আসনটি জয় করে, যা শাসক দল আম আদমি পার্টি (এএপি) বয়কট করেছিল।

নির্বাচন এবং বয়কট

শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের স্থায়ী কমিটির জন্য সদস্য নির্বাচনের ভোটাভুটি হয়। ৬টি আসনের জন্য অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের ষষ্ঠ এবং শেষ আসনটি ভারতীয় জনতা পার্টির দখলে যায়। এই ফলাফলকে বয়কট করে আম আদমি পার্টি, যারা বর্তমানে দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশন পরিচালনা করছে।

এএপির দাবি, এই নির্বাচন প্রক্রিয়া “অন্যায়” এবং “গণতান্ত্রিক নিয়মবিধি লঙ্ঘন” হয়েছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, বিজেপি ষষ্ঠ আসনে জয়লাভ করতে সমর্থ হয় কেবলমাত্র অনৈতিক উপায় অবলম্বন করে। যদিও বিজেপি এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তাদের জয়কে “স্বচ্ছ ও বৈধ” বলেই দাবি করেছে।

শেলি ওবেরয়ের আইনি পদক্ষেপ

শেলি ওবেরয়, যিনি দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়ে এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, ষষ্ঠ সদস্যের নির্বাচনে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে তা আইনসম্মত নয় এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি। তিনি সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই বিষয়ে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন।

ওবেরয়ের পক্ষ থেকে আদালতে পেশ করা নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এমসিডির স্থায়ী কমিটি নির্বাচনের সময় প্রয়োজনীয় বিধানগুলি উপেক্ষা করা হয়েছে। নির্বাচনের সময় এমসিডি পরিষদের ভেতর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা আইন এবং সংবিধানের মূল নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করা হয়। তিনি আদালতকে অনুরোধ করেছেন যেন এই নির্বাচন বাতিল করা হয় এবং একটি নতুন নির্বাচনের আদেশ দেওয়া হয়।

বিজেপির প্রতিক্রিয়া

বিজেপির পক্ষ থেকে এই অভিযোগগুলি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তাদের প্রার্থী সঠিক নিয়ম মেনেই নির্বাচিত হয়েছে এবং নির্বাচনে কোনো প্রকার গাফিলতি বা দুর্নীতি হয়নি। বিজেপির দিল্লি শাখার সভাপতি দাবি করেন, এএপি এই নির্বাচনে তাদের হারের বাস্তবতা মেনে নিতে পারছে না এবং তাই তারা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, এবং আদালতেও আমরা আমাদের পক্ষে রায় পাব।”

এছাড়াও, পড়ুন : গ্লোবাল হিটেড উইন্ডশীল্ড বাজার: প্রবণতা, পূর্বাভাস এবং বাজার কৌশলগত বিশ্লেষণ (2024 – 2031)


পূর্ববর্তী নির্বাচন ও বিতর্ক

দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের নির্বাচনের ইতিহাসে এর আগেও বিভিন্ন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিতে এএপি এবং বিজেপির মধ্যে বিরোধ বহু পুরনো এবং এই নির্বাচন সেই বিরোধেরই আরেকটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এমসিডির স্থায়ী কমিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখান থেকে দিল্লির বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমসিডি নির্বাচনগুলিতে এ ধরনের বিক্ষোভ এবং বিতর্ক রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে আসছে বহুদিন ধরে।

সুপ্রিম কোর্টে শুনানি

শেলি ওবেরয়ের করা আবেদন আগামী সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দিল্লির রাজনীতিতে এএপি এবং বিজেপির মধ্যে উত্তেজনার পারদ আরও চড়তে পারে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। আদালতের রায় কী হবে তা নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের উপর, কিন্তু এই আবেদন দিল্লির রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

এদিকে, এএপির অন্যান্য নেতারাও এই বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাদের দাবি, বিজেপি সমস্ত কিছুকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে দিল্লির জনগণের স্বার্থকে অবহেলা করছে। তারা আশা করছেন যে আদালত এই ইস্যুর সুষ্ঠু সমাধান করবে এবং দিল্লির জনগণকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার আইনি জটিলতা

দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের স্থায়ী কমিটি নির্বাচনের আইনত প্রক্রিয়া যথেষ্ট জটিল এবং বিতর্কিত। স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে আইনত সংবিধানিক বিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রায়ই পক্ষপাতিত্ব এবং অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এই নির্বাচনগুলিতে স্থানীয় দলীয় রাজনীতির ভূমিকা বরাবরই প্রভাবশালী, এবং ফলস্বরূপ, দিল্লির রাজনীতি প্রায়ই আদালতের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়।