ভারতীয় নৌবাহিনী আগামী ডিসেম্বর মাসে তাদের ষষ্ঠ এবং শেষ কালভারি-শ্রেণির সাবমেরিন ‘বাগশীর’ কমিশন করতে চলেছে, যা দেশের জলতল প্রতিরক্ষা ক্ষমতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। মুম্বাইয়ের মাজাগন ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড (MDL)-এ নির্মিত এই সাবমেরিনটি বর্তমানে চূড়ান্ত পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পদস্থ সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রকল্প ৭৫-এর অধীনে নির্মাণ
‘বাগশীর’ সাবমেরিনটি ভারতের ‘প্রকল্প ৭৫’ এর অংশ, যা প্রায় ₹২৩,৫৬২ কোটি মূল্যের একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে ছয়টি সাবমেরিন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, এবং ‘বাগশীর’ সেই সিরিজের শেষ সাবমেরিন। কালভারি-শ্রেণির সাবমেরিনগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এগুলি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন, যা উন্নত প্রযুক্তির সাথে শত্রুর নজর এড়িয়ে শত্রু জাহাজ এবং সাবমেরিনগুলোকে শনাক্ত করতে সক্ষম। ‘বাগশীর’ সাবমেরিনটি, এর আগের পাঁচটি সাবমেরিনের মতোই, উন্নত অস্ত্র এবং সেন্সর দিয়ে সজ্জিত, যা এটি দ্রুত এবং সঠিকভাবে লক্ষ্যবস্তু আঘাত করতে সক্ষম করে তোলে।
পরীক্ষা ও ট্রায়াল
‘বাগশীর’ বর্তমানে তার চূড়ান্ত ট্রায়ালের মধ্যে রয়েছে, যেখানে সাবমেরিনটির সমস্ত কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ট্রায়াল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর, এটি ভারতীয় নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশন করা হবে। কমিশনের মাধ্যমে ‘বাগশীর’ নৌবাহিনীর ক্ষমতায় বড়সড় সংযোজন হবে, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের আশেপাশের সমুদ্রে নৌরক্ষার ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে কার্যকর প্রমাণিত হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “মাঝাগন ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড থেকে নির্মিত এই সাবমেরিনটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এবং ভারতের নৌবাহিনীর আন্ডারওয়াটার যুদ্ধের ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করবে। ‘বাগশীর’ এর ট্রায়াল প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং ডিসেম্বরে এটি কমিশন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
কালভারি-শ্রেণির অন্যান্য সাবমেরিন
এর আগে, কালভারি-শ্রেণির পাঁচটি সাবমেরিন ইতিমধ্যে নৌবাহিনীতে কমিশন করা হয়েছে। তারা হলেন:
১. আইএনএস কালভারি
২. আইএনএস খান্দেরি
৩. আইএনএস করঞ্জ
৪. আইএনএস ভেলা
৫. আইএনএস বাগীর
প্রতিটি সাবমেরিনই নিজ নিজ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে এবং দেশের নৌবাহিনীর আন্ডারওয়াটার রণকৌশলের শক্তি বাড়িয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘বাগশীর’ কমিশনের মাধ্যমে এই শক্তির মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে।
উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা
ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের ক্রুদের আন্ডারওয়াটার যুদ্ধ এবং জীবনের নিরাপত্তার দিক থেকে আরও দক্ষ করে তোলার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছে। চলতি মাসের শুরুতে, নৌবাহিনী বিশাখাপত্তনমে অবস্থিত আইএনএস সতাভানায় ‘ভিনেত্র’ নামক একটি সাবমেরিন এস্কেপ ট্রেনিং ফ্যাসিলিটি চালু করেছে। এই ফ্যাসিলিটির মূল উদ্দেশ্য হল ক্রুদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা, যাতে তারা যেকোনও আপৎকালীন অবস্থায় দ্রুততার সাথে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। বিশেষ করে কালভারি-শ্রেণির সাবমেরিনের ক্ষেত্রে কোনও দুর্ঘটনা বা সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে ক্রুরা প্রস্তুত থাকতে পারবে।
এছাড়াও, পড়ুন : স্বয়ংক্রিয় প্যাসেঞ্জার কাউন্টার মার্কেটে মূল চালকদের বিশ্লেষণ করা: 2024 থেকে 2031 সময়ের জন্য বাজারের প্রবণতা এবং ভবিষ্যত আউটলুক
কৌশলগত শক্তি বৃদ্ধি
ভারতীয় নৌবাহিনী এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘বাগশীর’ এবং কালভারি-শ্রেণির অন্যান্য সাবমেরিনগুলি ভারতের নৌ প্রতিরক্ষা ক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এশিয়া মহাদেশের সমুদ্র সীমান্ত রক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনায় এই সাবমেরিনগুলি বিশেষভাবে কার্যকর। এর ফলে ভারতীয় নৌবাহিনী সমুদ্রের নিচে আরও সুদৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
কালভারি-শ্রেণির সাবমেরিনগুলো সুইডেন এবং ফ্রান্সের উন্নত প্রযুক্তির ভিত্তিতে তৈরি এবং তাদের আকার ও ক্ষমতার কারণে এগুলি শত্রুর নজর এড়িয়ে কাজ করতে সক্ষম। ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন হওয়ার কারণে এগুলি কম শব্দ করে এবং শত্রুদের পক্ষে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, ‘বাগশীর’ কমিশনের মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনীর আন্ডারওয়াটার প্রতিরক্ষা আরও দৃঢ় হবে। এছাড়া, এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর স্বনির্ভরতার দিক থেকেও একটি বড় সাফল্য হিসেবে ধরা হবে। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক মানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আগামী ডিসেম্বর মাসে ‘বাগশীর’ কমিশনের মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি আরও সুসংহত হবে এবং দেশের প্রতিরক্ষা কৌশল আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।