নতুন ভারতীয় ভাষার সম্মানসূচক মর্যাদা লাভের পথে আরও পাঁচটি ভাষা শাস্ত্রীয় ভাষার স্বীকৃতি পেল। বৃহস্পতিবার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, মোদী মন্ত্রিসভা মারাঠি, পালি, প্রাকৃত, অসমীয়া এবং বাংলা ভাষাকে শাস্ত্রীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। এই ঘোষণার পর, ভারতীয় ভাষার তালিকায় আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা যুক্ত হয়েছে।
বৈষ্ণব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সবসময় ভারতীয় ভাষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। আজ মারাঠি, পালি, প্রাকৃত, অসমীয়া এবং বাংলা ভাষাকে শাস্ত্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।”
শাস্ত্রীয় ভাষার মর্যাদা এবং তার গুরুত্ব
ভারতে শাস্ত্রীয় ভাষার স্বীকৃতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ। এই স্বীকৃতি ভাষাগুলির সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক গুরুত্বকে তুলে ধরে এবং গবেষণার নতুন পথ খুলে দেয়। ভাষা বিশেষজ্ঞদের মতে, শাস্ত্রীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া ভাষাগুলির প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা হবে এবং তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও সুরক্ষিত থাকবে।
শাস্ত্রীয় ভাষার তালিকায় ইতিমধ্যেই তামিল, সংস্কৃত, তেলেগু, কন্নড়, মালায়ালম এবং ওড়িয়া ছিল। নতুন সংযোজন হিসেবে এবার এই পাঁচটি ভাষা—মারাঠি, পালি, প্রাকৃত, অসমীয়া এবং বাংলা— এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিক্রিয়া
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিশেষ করে অসম ও পশ্চিমবঙ্গে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা টুইটারে (বর্তমানে এক্স) লেখেন, “অসমীয়া ভাষাকে শাস্ত্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজিকে ধন্যবাদ জানাই। এটা আমাদের জন্য একটি গৌরবময় মুহূর্ত।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “বাংলা ভাষার শাস্ত্রীয় মর্যাদা পাওয়া আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতি প্রচারের একটি বড় পদক্ষেপ। আমরা কৃতজ্ঞ।”
শাস্ত্রীয় ভাষার সংজ্ঞা এবং তা অর্জনের শর্তাবলী
কোনো ভাষাকে শাস্ত্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কিছু বিশেষ শর্তাবলী রয়েছে। ভাষাটির প্রাচীনতা এবং তার সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য বিচার করে এই মর্যাদা দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে ভাষাগুলির প্রাচীন সাহিত্যিক ঐতিহ্য রয়েছে এবং যেগুলি প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ বছরের পুরনো, সেগুলিকেই শাস্ত্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের মতে, শাস্ত্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য এই শর্তাবলী পূরণ করতে হবে— ১. ভাষাটির প্রাচীনতা কমপক্ষে ১৫০০ বছর হতে হবে। ২. ভাষাটির একটি বিশেষ সাহিত্যিক ঐতিহ্য থাকা আবশ্যক। ৩. ভাষার প্রাচীন ও আধুনিক সংস্করণের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য থাকতে হবে। ৪. ভাষাটির স্বকীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি থাকতে হবে যা পরবর্তী কালে অন্য কোনও ভাষা বা সংস্কৃতির থেকে ধার করা নয়।
নতুন শাস্ত্রীয় ভাষা হিসেবে সংযোজিত ভাষাগুলি
এবার শাস্ত্রীয় ভাষার তালিকায় স্থান পাওয়া পাঁচটি ভাষা হচ্ছে মারাঠি, পালি, প্রাকৃত, অসমীয়া এবং বাংলা। এই ভাষাগুলির প্রত্যেকটিরই নিজস্ব সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, যা একাধিক শতাব্দী ধরে বিকশিত হয়েছে।
মারাঠি ভাষার দীর্ঘ সাহিত্যিক ঐতিহ্য এবং ছত্রপতি শিবাজী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মারাঠা শাসকদের আমলে এই ভাষার উন্নয়ন ঘটে। অন্যদিকে, বাংলা ভাষার হাজার বছরের ঐতিহ্য এবং সাহিত্যিক সংবেদনশীলতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বাংলা ভাষা মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব অংশের প্রধান ভাষা এবং এর সাহিত্যিক ঐতিহ্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। অসমীয়া ভাষার উল্লেখযোগ্য প্রাচীন সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় তাকে এই তালিকায় জায়গা করে দিয়েছে।
এছাড়াও, পড়ুন : মহাকাশ আবরণ বাজার: এমনকি প্লেন একটি পরিবর্তন প্রাপ্য কারণ
পালি ও প্রাকৃতের ভূমিকা
ইতিহাসবিদদের মতে, পালি ও প্রাকৃত প্রাচীন ভারতীয় ভাষা, যা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাহিত্যিক গ্রন্থ রচনায় ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষত বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন মূল গ্রন্থ পালি ভাষায় রচিত হয়েছে। প্রাকৃত ভাষা জৈন ধর্ম ও অন্যান্য প্রাচীন ভারতীয় ধর্মীয় দর্শনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং নতুন গবেষণা ক্ষেত্র
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত দেশের বিভিন্ন ভাষায় নতুন গবেষণা ও সাংস্কৃতিক প্রচেষ্টা বাড়াবে বলে মনে করছেন ভাষাবিদরা। শাস্ত্রীয় ভাষার মর্যাদা পাওয়ার পর এই ভাষাগুলিতে নতুন করে গবেষণার পথ খুলে যাবে এবং একাডেমিক স্তরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ভাষাগুলি নিয়ে বিশেষ গবেষণা কার্যক্রম শুরু হবে।
কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, শাস্ত্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির পর সরকার এই ভাষাগুলির গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বিশেষ তহবিল বরাদ্দ করবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তার মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় ভাষার সমৃদ্ধি ও সংস্কৃতির বিস্তারকে উৎসাহিত করবে বলে ভাষাবিদরা মত প্রকাশ করেছেন।