আরজি কর হত্যাকাণ্ড: মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেন পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা

আরজি কর হত্যাকাণ্ড: মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেন পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা

top news

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালে ধর্মঘটরত জুনিয়র চিকিৎসকরা সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের ১৫ দিনের অনশন ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগকে কেন্দ্র করে তাঁরা এই আন্দোলনে নেমেছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সোমবার সাক্ষাৎ করেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের একটি দল। (ছবি সৌজন্যে: সমীর জানা/হিন্দুস্তান টাইমস)

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার পর ১৭ জন জুনিয়র চিকিৎসকের একটি দল জানিয়েছে, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে কিছু নির্দেশিকা কার্যকর করার আশ্বাস পেয়েছেন, তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যায়নি।

চিকিৎসকদের দাবি, “আজকের বৈঠকে (মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে) আমরা কিছু নির্দেশের আশ্বাস পেয়েছি, তবে রাজ্য সরকারের শরীরী ভাষা খুব একটা ইতিবাচক ছিল না। সাধারণ মানুষ আমাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। আমাদের মৃত সহকর্মীর (আরজি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসক) পরিবারের সদস্যরাও আমাদের কাছে আবেদন করেছেন যে আমরা যেন স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার আগে অনশন বন্ধ করি।”

ধর্মঘটের সূচনা:

আরজি কর মেডিকেল কলেজের এক জুনিয়র চিকিৎসকের রহস্যজনক মৃত্যু এবং তাঁর উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরা বিক্ষোভে নেমেছিলেন। অভিযোগটি উঠতেই চিকিৎসক মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। চিকিৎসকরা দ্রুত বিচার এবং তদন্তের দাবি জানান।

আন্দোলনের প্রসার:

এই আন্দোলনটি ধীরে ধীরে আরও বড় আকার নেয়, যখন অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও আন্দোলনে যোগ দেন। জুনিয়র চিকিৎসকরা “ফাস্ট-আনট-ডেথ” (অর্থাৎ অনশন) ধর্মঘট শুরু করেন এবং তাঁদের একমাত্র দাবি ছিল অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া:

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। বৈঠকের পর চিকিৎসকরা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে কিছু নির্দেশ কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের চাহিদার প্রতি যে মনোভাব ছিল, তা তেমন ইতিবাচক ছিল না বলে অভিযোগ।

চিকিৎসকদের বক্তব্য, “আমরা আশা করেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। তবে সরকারি দিক থেকে কিছুটা উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে।”

জনসমর্থন:

ধর্মঘট চলাকালীন সাধারণ মানুষ চিকিৎসকদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটেও আন্দোলনকারীদের জন্য সমর্থন পাওয়া যায়। মৃত চিকিৎসকের পরিবারও চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল এবং তাঁদের কাছে অনুরোধ জানায় যে, তাঁরা যেন আর শরীর খারাপ না করেন এবং অনশন প্রত্যাহার করেন।

এছাড়াও, পড়ুন : Autogenous ভ্যাকসিন বাজার রিপোর্ট


পরিস্থিতির উন্নতি:

অনশন এবং ধর্মঘটের কারণে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছিল। রোগীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছিলেন, যদিও অনেক চিকিৎসক ধর্মঘটের মাঝেও জরুরি পরিষেবা অব্যাহত রেখেছিলেন।

ধর্মঘট প্রত্যাহারের পরে চিকিৎসা পরিষেবা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, তাঁদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল এবং সেই কারণেই অনশন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তদন্ত এবং বিচারপ্রক্রিয়া:

আরজি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে এবং বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। চিকিৎসকরা দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি করেছেন।

চিকিৎসকরা বলেন, “আমরা চাই, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এবং দোষীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়। এর আগে রাজ্যের কোনো ঘটনায় এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি।”

পরবর্তী পদক্ষেপ:

ধর্মঘট প্রত্যাহার হলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁরা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে তাঁদের দাবিতে অনড় থাকবেন। তবে আপাতত ধর্মঘট এবং অনশন কর্মসূচি বন্ধ থাকলেও পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হবে বলে জানান তাঁরা।

পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী সময়ে তাঁরা আরও কঠোর আন্দোলনের পথও বেছে নিতে পারেন বলে জানান।