সম্পাদকীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ: বসন বালার প্রিজন-ব্রেক থ্রিলার ‘জিগরা’ সিনেমায় আলিয়া ভাটের অভিনয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই সিনেমায় তাকে রাগী তরুণীর ভূমিকায় দেখা গেলেও, অমিতাভ বচ্চনের প্রসিদ্ধ “অ্যাংরি ইয়ং ম্যান” চরিত্রের প্রতিচ্ছবি যেন এতে অনুপস্থিত। যদিও আলিয়া ভাট এর আগেও রাগী চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তবে এবারের চরিত্রে তার রাগ বা ভেতরের আবেগ সেই গভীরতায় পৌঁছাতে পারেনি বলে সমালোচকরা মনে করছেন।
বসন বালার চলচ্চিত্রে আলিয়া ভাটের ভূমিকা
বসন বালার পরিচালনায় ‘জিগরা’ চলচ্চিত্রটি আলিয়া ভাটের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং ভূমিকা হয়ে দাঁড়ায়। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র সাত্যাকে দেখা যায় তার ভাই অঙ্কুরকে (বেদাং রায়না) বিদেশে মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা করতে লড়াই করতে। সাত্যার একমাত্র উদ্দেশ্য তার ভাইয়ের জীবন বাঁচানো। এই একগুঁয়ে লক্ষ্য তাকে প্রতিনিয়ত অস্থির রাখে। সিনেমায় তার বহির্গামী রাগ এবং একাগ্রতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়, তবে সমালোচকদের মতে, চরিত্রটির গভীরতা বা আবেগের পরিমাণ যথেষ্ট না।
সিনেমার কিছু বিশেষ অংশে আলিয়া ভাটের চরিত্রকে ‘বচ্চন হওয়ার’ জন্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। কিন্তু চলচ্চিত্রপ্রেমী এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অমিতাভ বচ্চনের যে রাগী তরুণের চরিত্র (Angry Young Man) বলিউডে আইকনিক হয়ে উঠেছে, তার সেই অভ্যন্তরীণ নৈতিকতা এবং প্রতিক্রিয়াশীল রাগের সমতুল্য কিছু আলিয়া ভাটের চরিত্রে অনুপস্থিত।
‘গলি বয়’ থেকে ‘জিগরা’ পর্যন্ত
২০১৯ সালে জোয়া আখতারের পরিচালিত ‘গলি বয়’ সিনেমায় আলিয়া ভাটের অভিনয় বিশেষ প্রশংসিত হয়েছিল। সাফিনা চরিত্রে তার রাগের বহিঃপ্রকাশ এবং সেই রাগের ন্যায়সঙ্গত কারণ ছিল। সাফিনা যখন বুঝতে পারেন যে তার প্রেমিক মুরাদ (রণবীর সিং) তাকে মিথ্যা বলেছে, তখনই সেই আস্থার ভঙ্গ তাকে রাগী করে তোলে। তার মনের ভেতরের সন্দেহ এবং মিথ্যার জন্য অবিশ্বাস স্পষ্টভাবে তাকে সহিংস করতে বাধ্য করে। সেই তীব্র রাগ এবং নৈতিক অবস্থান তাকে একটি বিশেষ চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
কিন্তু, ‘জিগরা’ সিনেমায় সাত্যার রাগের পিছনে কোনো নির্দিষ্ট নৈতিক কারণ বা গভীরতা পাওয়া যায় না। তার একমাত্র লক্ষ্য ভাইকে বাঁচানো, এবং সেই লক্ষ্য চরিত্রটিকে সীমাবদ্ধ করে রাখে। সিনেমার প্রেক্ষাপটে তার ক্রমাগত “অঙ্কুর বাঁচবে না” মন্ত্রের মতো সংলাপ পুনরাবৃত্তি তাকে কিছুটা একঘেয়ে করে তুলেছে বলে সমালোচকরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
চরিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণ
অমিতাভ বচ্চনের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ চরিত্রগুলি সবসময় একাধিক নৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। এই ধরনের চরিত্রগুলির রাগ শুধু ব্যক্তিগত লড়াইয়ের ফল নয়, বরং সমাজের প্রতি এক প্রকার প্রতিক্রিয়া ছিল। এটি তার চরিত্রকে আরও বেশি গভীর এবং শক্তিশালী করে তুলত। উদাহরণস্বরূপ, বচ্চনের ‘দেওয়ার’, ‘জাঞ্জির’ এবং ‘শোলay’ সিনেমাগুলিতে তার চরিত্রের রাগ এবং নৈতিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে যে সংঘাতগুলি ছিল, সেগুলি চরিত্রকে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তোলে। কিন্তু ‘জিগরা’ সিনেমায় আলিয়া ভাটের সাত্যা সেই একই প্রভাব তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে হয়। সাত্যার একমাত্র লড়াই তার ভাইকে বাঁচানোর জন্য, কিন্তু তার কোনো নৈতিক অবস্থান বা সমাজের সঙ্গে তার লড়াইয়ের তীব্রতা সেভাবে প্রকাশিত হয় না।
সিনেমার অন্যান্য দিক
‘জিগরা’ সিনেমাটি স্টাইল এবং প্রেজেন্টেশনের উপর অত্যন্ত মনোযোগ দিয়েছে। তবে, সমালোচকরা মনে করছেন, এই স্টাইলের মধ্যে যে আবেগ এবং গভীরতা থাকা উচিত ছিল তা অনুপস্থিত। আলিয়া ভাটের চরিত্র সাত্যা দৃঢ় এবং আত্মপ্রত্যয়ী হলেও, সেই শক্ত চরিত্রে এক ধরণের মানবিক সংযোগের অভাব দেখা গেছে। সিনেমার চিত্রনাট্য এবং সংলাপ গুলোও কিছুটা একঘেয়ে হয়ে উঠেছে বলে সমালোচকরা মনে করছেন।
সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া
সিনেমা সমালোচক দেবাংশ শর্মা উল্লেখ করেছেন যে, আলিয়া ভাটের অভিনয়ে দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও, সাত্যার চরিত্রটিতে যে রাগ এবং ভেতরের দ্বন্দ্বের জায়গা থাকা উচিত ছিল তা অনুপস্থিত। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, অমিতাভ বচ্চনের মতো আইকনিক চরিত্রগুলির তুলনায় সাত্যা শুধুমাত্র একটি পৃষ্ঠস্থ চরিত্র হিসেবে রয়ে গেছে। তার রাগ কোনো গভীর বোধের ফল নয়, বরং শুধুমাত্র একটি পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া। এই কারণে, দর্শকদের সঙ্গে তার চরিত্রের সেই গভীর সংযোগ তৈরি হয়নি।
‘জিগরা’ সিনেমাটি স্টাইল এবং প্রেজেন্টেশনের জন্য প্রশংসা পেলেও, চরিত্রগুলির আবেগের অভাব এবং সংলাপের পুনরাবৃত্তি সিনেমাটিকে কিছুটা দুর্বল করে তুলেছে।