নয়াদিল্লি: ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভার্চুয়ালি তিনটি পারম রুদ্র সুপারকম্পিউটারের উদ্বোধন করেন। এই সুপারকম্পিউটারগুলি ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এবং জাতীয় সুপারকম্পিউটিং মিশনের (NSM) অধীনে উন্নত করা হয়েছে। পারম রুদ্রগুলি পুনে, দিল্লি এবং কলকাতায় স্থাপন করা হয়েছে, যা বহুমুখী বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিশেষভাবে সহায়ক হবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রযুক্তি এবং গণনাশক্তির উপর ভিত্তি করে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যা নির্ভরশীল নয়। আমাদের অংশগ্রহণ শুধুমাত্র বিট এবং বাইটে নয়, বরং টেরাবাইট এবং পেটাবাইটে হওয়া উচিত। এই অর্জন প্রমাণ করে যে আমরা সঠিক পথে সঠিক গতিতে এগিয়ে চলেছি।”
এছাড়াও, পড়ুন :ভেগান পনির এবং ক্রিম চিজ বাজারের প্রবণতা
₹১৩০ কোটির প্রকল্প
পারম রুদ্র সুপারকম্পিউটারের মোট ব্যয় হয়েছে ₹১৩০ কোটি। এই সুপারকম্পিউটারগুলি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং (HPC) সিস্টেমের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। ভারতের জাতীয় সুপারকম্পিউটিং মিশন (NSM) এর অধীনে, দেশের নিজস্ব প্রযুক্তিতে এ ধরণের সুপারকম্পিউটারের উন্নয়ন স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভারত বর্তমানে বৈশ্বিক সুপারকম্পিউটিং ক্ষমতার একটি অংশ অর্জন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ধরনের শক্তিশালী HPC সিস্টেম দেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণা, উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্যে উঠে আসে যে, “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে আমাদের পিছিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের ভবিষ্যতের লক্ষ্য সুপারকম্পিউটিং-এ বৈশ্বিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।”
তিনটি শহরে স্থাপিত
পারম রুদ্র সুপারকম্পিউটারগুলি পুনে, দিল্লি এবং কলকাতায় স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে পুনের জায়ান্ট মিটার রেডিও টেলিস্কোপ (GMRT) এই নতুন সিস্টেম ব্যবহার করে মহাজাগতিক ঘটনার গবেষণায় সহায়ক হবে। বিশেষত, ফাস্ট রেডিও বার্স্টস (FRBs) এর মতো জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা অনুসন্ধানে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও, কলকাতা ও দিল্লিতে স্থাপিত সিস্টেমগুলি দেশের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে তাদের গবেষণায় সাহায্য করবে।
দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অগ্রগতি
জাতীয় সুপারকম্পিউটিং মিশন ২০১৫ সালে শুরু হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল ভারতের নিজস্ব উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহারের মাধ্যমে গবেষণা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নিশ্চিত করা। NSM-এর অধীনে ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র এবং শিল্প খাতে সুপারকম্পিউটার স্থাপন করা হয়েছে। পারম রুদ্র সেই ধারার একটি সাম্প্রতিক সংযোজন।
ভারত ইতিমধ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপারকম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য একটি দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছে। পারম রুদ্র সুপারকম্পিউটারের উন্নয়ন দেশের নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। এগুলি গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (AI) ক্ষেত্রে গবেষণাকে নতুন মাত্রা প্রদান করবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্য
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী তার ভাষণে বলেন, “প্রতিটি গবেষণার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। আমাদের বিজ্ঞানীরা গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সুপারকম্পিউটিং-এর সর্বোচ্চ সম্ভাবনা ব্যবহার করছেন। পারম রুদ্র এই ক্ষেত্রে আমাদের উন্নয়নকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা ক্রমবর্ধমান, এবং পারম রুদ্র সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।”
প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন যে, “আমরা যে নতুন প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতির পথে এগোচ্ছি তা বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মানচিত্রে আমাদের অবস্থানকে আরো মজবুত করবে।