বদলাপুর মামলার অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা: পুলিশের পাল্টা গুলি চালানো আত্মরক্ষার দাবি, তদন্ত শুরু

বদলাপুর মামলার অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা: পুলিশের পাল্টা গুলি চালানো আত্মরক্ষার দাবি, তদন্ত শুরু

top news

বদলাপুর যৌন নিপীড়ন মামলার প্রধান অভিযুক্ত অক্ষয় শিণ্ডেকে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। অভিযুক্তকে নবি মুম্বাইয়ের তালোজা কারাগার থেকে থানেতে স্থানান্তরের সময় পুলিশের পাল্টা গুলি চালানো হয় বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার, এই ঘটনার বিষয়ে মূলত গুলি চালানো ইনস্পেক্টর সঞ্জয় শিণ্ডে জানিয়েছেন, তিনি আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালাতে বাধ্য হন।

সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনার সময় পুলিশের গাড়িতে অভিযুক্ত এবং কয়েকজন কনস্টেবল ছাড়াও অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ ইনস্পেক্টর (এপিআই) নিলেশ মোর ছিলেন। ইনস্পেক্টর সঞ্জয় শিণ্ডে, যিনি গাড়ির সামনের আসনে ড্রাইভারের পাশে বসেছিলেন, তিনি জানান, অভিযুক্ত অক্ষয় শিণ্ডে হঠাৎ করে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন।

কীভাবে ঘটনার সূত্রপাত

ইনস্পেক্টর শিণ্ডে জানিয়েছেন, “গাড়িটি শিলফাটা রোড দিয়ে যাওয়ার সময় এপিআই মোর আমাকে জানালেন যে অক্ষয় আচমকা উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন।” এই মুহূর্তে গাড়িতে থাকা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আলোচনায় অক্ষয় শিণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের দিকে চিৎকার করে বলেন, “তোমরা আমাকে আবার কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? আমি এবার কী করেছি?” পুলিশদের উদ্দেশ্যে গালাগালি করার পাশাপাশি অক্ষয় হুমকি দেন যে তিনি কাউকে ছাড়বেন না।

সঞ্জয় শিণ্ডে জানান, পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য তিনি গাড়িটি থামান এবং অক্ষয়কে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে, ঘটনাটি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে মুম্ব্রা বাইপাসের কাছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

পুলিশের সাথে লড়াই এবং গুলি চালানোর মুহূর্ত

ইনস্পেক্টর শিণ্ডে আরও জানান, অক্ষয় এপিআই মোরের পিস্তলটি হঠাৎ করে ছিনিয়ে নেন এবং দুইজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পিস্তল থেকে গুলি ছুটে যায়, যা এপিআই মোরের উরুতে লাগে এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে সঞ্জয় শিণ্ডে নিজেকে এবং অন্য পুলিশ সদস্যদের জীবন রক্ষা করার জন্য গুলি চালান বলে তিনি দাবি করেন। “অক্ষয় অত্যন্ত আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন এবং সেই মুহূর্তে আমার কাছে আত্মরক্ষা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না,” তিনি বলেন।

এছাড়াও, পড়ুন :ফ্লাইটলাইন এয়ার ডেটা টেস্টে মূল চালকদের বিশ্লেষণ করা বাজার সেট করে: 2024 থেকে 2031 সময়ের জন্য বাজারের প্রবণতা এবং ভবিষ্যতের আউটলুক

ঘটনাস্থলে তদন্ত

অক্ষয় শিণ্ডেকে গুলি করার পর, ঘটনাস্থলে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়। শিণ্ডের শবদেহ মুম্বাইয়ের জেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। একইসাথে, এপিআই মোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে।

পুলিশের বিবৃতি এবং আত্মরক্ষার দাবি

এ ঘটনার বিষয়ে পুলিশের বক্তব্যে বলা হয়েছে যে, অভিযুক্ত অক্ষয় শিণ্ডে গত কয়েকদিন ধরে মানসিকভাবে অস্থিতিশীল ছিলেন এবং আগ্রাসী আচরণ করছিলেন। নবি মুম্বাইয়ের তালোজা কারাগার থেকে তাকে থানেতে স্থানান্তরের সময় এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, অক্ষয়কে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়াটি নিরাপদভাবে সম্পন্ন করার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।

পুলিশ আরও জানায়, অক্ষয় শিণ্ডে একটি বড় যৌন নিপীড়ন মামলার প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন এবং তার বিচার প্রক্রিয়া চলছিল। পুলিশের পাল্টা গুলি চালানোর ঘটনাটি আত্মরক্ষার জন্যই ছিল বলে দাবি করা হয়, কারণ পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যেখানে পুলিশ সদস্যদের জীবন বিপন্ন হতে পারত।

মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া এবং বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি

এই ঘটনার পর পরই বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠন থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। তারা পুলিশের পাল্টা গুলি চালানোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং একটি পূর্ণাঙ্গ বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন। সংস্থাগুলোর দাবি, পুলিশের হাতে অভিযুক্তদের মৃত্যুর ঘটনা এভাবে ঘটলে বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।

বিচারবিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজনীয়তা

অক্ষয় শিণ্ডের মৃত্যুর পর এ ঘটনায় অনেকেই বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো অভিযুক্তকে এইভাবে গুলি করে হত্যা করা হলে তার পেছনের কারণ এবং ঘটনার সময় কী ঘটেছিল তা খতিয়ে দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশি হেফাজতে থাকা কোনো ব্যক্তির নিরাপত্তা আইনত পুলিশের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার দাবি কতটা সঠিক, তা তদন্তের মাধ্যমেই প্রমাণিত হতে পারে।

অক্ষয় শিণ্ডের অতীত এবং মামলার প্রসঙ্গ

অক্ষয় শিণ্ডে বদলাপুরে সংঘটিত একটি যৌন নিপীড়ন মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিচারাধীন ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক নারীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

এখন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং তদন্তের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে এবং পুলিশের গুলি চালানোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে, এই মুহূর্তে পুলিশের দাবি যে, এটি সম্পূর্ণ আত্মরক্ষার জন্য করা হয়েছে, সেই দাবির সত্যতা বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে স্পষ্ট হতে পারে।