প্রখ্যাত অলিম্পিক কুস্তিগীর সাকশী মালিক মঙ্গলবার মিডিয়ার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, সংবাদ মাধ্যম নারীদের সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করছে এবং ভারতের প্রাক্তন কুস্তি ফেডারেশন প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহের প্রতি যথাযথ দৃষ্টি দিচ্ছে না।
সাকশী মালিক, যিনি কুস্তিতে দেশের জন্য গর্বিত হওয়ার পাশাপাশি নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন, জানান যে তিনি তার নতুন বইয়ের বিষয়ে আলোচনা করতে মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু মিডিয়া কিভাবে কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং ব্রিজভূষণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবরকে উপেক্ষা করছে তা দেখে তিনি হতাশ।
সাকশী মালিক একটি পোস্টে লেখেন, “আমি মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি আমার নতুন বইয়ের বিষয়ে তথ্য শেয়ার করতে। আমি মনে করি মিডিয়া একটি গণতন্ত্রে একটি প্রবাহক হিসেবে কাজ করে এবং নারীদের সমস্যা উত্থাপন করা উচিত। কিন্তু আমি আজ সকালে সংবাদ দেখতে পাচ্ছি, নারীদের সমস্যা অদৃশ্য এবং আমাদের কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। ব্রিজভূষণের কালো কীর্তির কোন উল্লেখ নেই এবং নারীদের কুস্তিগীরদের সংগ্রামের কথাও নেই।”
এই মন্তব্যগুলি সাকশী মালিকের তরফে প্রাক্তন ফেডারেশন প্রধান ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে তা প্রতিস্থাপন করে। তিনি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে একাধিক নারীর অভিযোগের মুখোমুখি হন, যেখানে দাবি করা হয় যে তিনি যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িত। এই অভিযোগের প্রেক্ষাপটে কুস্তিগীরদের একটি বৃহৎ আন্দোলন শুরু হয়, যা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এবং জনমতেও আলোড়ন সৃষ্টি করে।
সাকশী মালিকের পাশাপাশি, অন্যান্য অনেক কুস্তিগীরও এই আন্দোলনে যোগ দেন এবং তারা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এই আন্দোলন কেবল কুস্তি শিল্পকে নয়, বরং নারীদের অধিকার এবং সুরক্ষা বিষয়েও সমাজে একটি গভীর আলোচনা শুরু করেছে।
মিডিয়ার ভূমিকা এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাকশী মালিকের অভিযোগ অনুযায়ী, সংবাদ মাধ্যমের একাংশ নারীদের অধিকারের আন্দোলনকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং তারা কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করছে, যা নারীদের বিরুদ্ধে আরও হিংস্রতার সৃষ্টি করতে পারে।
সাকশী মালিকের বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, সংবাদ মাধ্যমের নীরবতা এবং উদাসীনতা সমাজে নারীদের ওপর সহিংসতার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এদিকে, সাকশী নিজেকে নারীদের অধিকার এবং ক্রীড়াঙ্গনে সুরক্ষার জন্য একটি আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন।
নতুন বইটির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি আমার জীবনের সংগ্রাম এবং কুস্তির প্রতি আমার ভালোবাসা নিয়ে লেখা এই বইটিকে সমাজের জন্য উৎসর্গ করেছি। কিন্তু আমি চাই যে আমার কথা এবং অভিজ্ঞতাগুলোকে ভুল বোঝা হোক। নারীদের সম্মান, সুরক্ষা এবং তাদের অধিকার নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, কিন্তু এখন আমি যা দেখছি তা হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার।”
সাকশী মালিকের এই মন্তব্যগুলো সংবাদ মাধ্যমের জন্য একটি নতুন প্রশ্ন তুলে ধরছে। কতটা দায়িত্বশীলভাবে তারা নারীদের সমস্যাগুলোকে তুলে ধরছে এবং কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে সেই প্রশ্ন এখন রয়ে গেছে।
সংবাদ মাধ্যমের ভুমিকা নিয়ে সাকশী মালিকের এ মন্তব্যগুলি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, নারীদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করা এবং তাদের অভিজ্ঞতাগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া কতটা জরুরি। কেবলমাত্র ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়, বরং সার্বিকভাবে নারীদের সমস্যাগুলোকে আলোচনায় আনতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সাকশী মালিকের এই মন্তব্যগুলি কি সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে? নারীদের অধিকার এবং সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা কি আরও বৃদ্ধি পাবে? এই সবই ভবিষ্যতের বিষয়। তবে আপাতত সাকশী মালিকের বক্তব্য এবং তার ক্ষোভ সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করছে।
এমন একটি প্রেক্ষাপটে, সাকশী মালিকের এই মন্তব্যগুলো কেবল তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, বরং নারীদের অধিকারের আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
সাকশী মালিকের শক্তিশালী বক্তব্য এবং সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্ব নিয়ে তার অভিযোগ, নারীদের অধিকার এবং সুরক্ষার জন্য একটি নতুন আলোচনার সূচনা করছে। দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের অধিকারের উন্নয়নের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলেই মনে হচ্ছে।