রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮৫ জন ভারতীয় নাগরিক ইতোমধ্যে মুক্তি পেয়েছেন, এবং কর্তৃপক্ষ আরও ২০ জন ভারতীয়ের মুক্তির জন্য কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিস্রি। সোমবার তিনি এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।
বিক্রম মিস্রি বলেছেন, “ভারতের বুঝতে পারা মতে, এখনও প্রায় ২০ জন ভারতীয় রাশিয়ান সামরিক বাহিনীতে রয়েছেন।” এই প্রসঙ্গে ভারত রাশিয়ার পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, রাশিয়ার কাজান শহরে আগামী মঙ্গলবার ব্রিকস সম্মেলনের আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
সেনাবাহিনীর সহযোগী কর্মী হিসেবে ভারতীয় নাগরিকদের নিয়োগ
রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত থাকা ভারতীয় নাগরিকরা মূলত রান্নার কর্মী এবং অন্যান্য সহায়ক কর্মী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের মুক্তি এবং দেশে প্রত্যাবর্তন ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের সামনের সারিতে লড়াইয়ে অংশ নিয়ে কমপক্ষে নয়জন ভারতীয়ের মৃত্যুর ঘটনার পর। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে জুলাই মাসে মস্কোতে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ভারত-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনেও আলোচনা করেছিলেন।
মুক্তির প্রক্রিয়া ও বর্তমান অবস্থা
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে ভারতীয় নাগরিকদের নিয়োগের বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের নজরে আসে যখন ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করে। রাশিয়ান সামরিক বাহিনীতে কর্মরত বেশ কিছু ভারতীয় নাগরিক যুদ্ধক্ষেত্রে গুরুতর ঝুঁকির মুখোমুখি হওয়ার কারণে ভারত সরকার তাদের মুক্তির জন্য বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ শুরু করে।
ভারতের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, রাশিয়ার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ফলাফলস্বরূপ এখন পর্যন্ত ৮৫ জন ভারতীয়কে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো প্রায় ২০ জন ভারতীয় রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর অধীনে কর্মরত রয়েছেন। তাদের মুক্তির বিষয়টি ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বৈঠকের গুরুত্ব
রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর মধ্যে আসন্ন বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রিকস সম্মেলনের আয়োজনে এই দুই নেতা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে, যার মধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের মুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভারত সরকার রাশিয়ান প্রশাসনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে এবং এ বিষয়ে কোনো ঢিলেমি না দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। যেসব ভারতীয় এখনও রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে রয়েছেন, তাদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিনিয়ত আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে।
রাশিয়ায় ভারতীয়দের ভূমিকা
রাশিয়ায় ভারতীয় নাগরিকদের ভূমিকা মূলত রান্নার কর্মী, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং অন্যান্য সহায়ক কাজের সাথে সম্পর্কিত ছিল। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ান সামরিক বাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত ভারতীয়দের মধ্যে অনেকেই ফ্রন্টলাইনে গিয়ে যুদ্ধ করতে বাধ্য হন। এতে করে বেশ কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক প্রাণ হারান, যা নিয়ে ভারতীয় সরকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এছাড়াও, পড়ুন : সিরাপ বাজার: স্বাদযুক্ত উদ্ভাবনের সাথে ভবিষ্যতকে মিষ্টি করা
মোদী-পুতিন সম্পর্কের প্রভাব
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক এই ইস্যুটির সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মোদী আগেও পুতিনের সাথে বেশ কয়েকবার ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আলোচনা করেছেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের সামরিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা এই বিষয়ে সমাধান বের করতে সময় লাগাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ
২০২৪ সালের জুলাই মাসে রাশিয়া এবং ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদী সরাসরি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর থেকে ভারতীয় নাগরিকদের মুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৮৫ জন ভারতীয় মুক্তি পেলেও, আরও ২০ জনের মুক্তির জন্য রাশিয়া সরকারের সাথে আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে।
এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার সামরিক বাহিনী থেকে ভারতীয়দের মুক্তি প্রক্রিয়া একটি জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তবে ভারত সরকার প্রতিনিয়ত রাশিয়ার সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।