ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (সিসিএস) বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪, দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। এই চুক্তির অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ৩১টি MQ-9B হাই অল্টিচ্যুড লং এন্ডুরেন্স (HALE) সশস্ত্র ড্রোন কেনা হবে এবং স্বদেশীয় প্রযুক্তিতে দুটি পরমাণু শক্তি চালিত আক্রমণাত্মক সাবমেরিন নির্মাণ করা হবে।
ড্রোন চুক্তি:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংস্থা জেনারেল অ্যাটমিক্স অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেমস ইনকর্পোরেটেড (GA-ASI) থেকে ৩১টি MQ-9B ড্রোন কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই চুক্তির মোট মূল্য প্রায় ৩.৯৯ বিলিয়ন ডলার। এই সশস্ত্র ড্রোনগুলি উচ্চতর উচ্চতায় দীর্ঘ সময় ধরে উড়তে সক্ষম এবং শত্রুপক্ষের উপর নজরদারি চালাতে ও আক্রমণ পরিচালনায় অত্যন্ত দক্ষ। এগুলি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর তিনটি শাখার জন্য কেনা হচ্ছে – সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী।
এই ড্রোনগুলি ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য বড় ধরনের উন্নতি বলে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এগুলি অত্যন্ত নির্ভুলভাবে আক্রমণ চালাতে সক্ষম। MQ-9B ড্রোনের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বাহিনী দূরবর্তী অবস্থান থেকে শত্রুদের উপর নজরদারি চালিয়ে নিরাপদে আক্রমণ করতে পারবে। এতে সামরিক বাহিনীর কর্মীরা কোনো সরাসরি সংঘর্ষে জড়ানোর ঝুঁকি ছাড়াই দূর থেকে অপারেশন সম্পন্ন করতে পারবে।
এই চুক্তির অংশ হিসেবে, জেনারেল অ্যাটমিক্স ভারতে একটি গ্লোবাল মেইনটেনেন্স, রিপেয়ার এবং ওভারহল (MRO) কেন্দ্র স্থাপন করবে। এই কেন্দ্রটি ভারতের অফসেট বাধ্যবাধকতা পূরণের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর মাধ্যমে ড্রোনগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজ সহজ হবে।
স্বদেশীয় পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন নির্মাণ:
সিসিএস আরও দুটি পরমাণু শক্তি চালিত আক্রমণাত্মক সাবমেরিন (SSN) নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। এই সাবমেরিনগুলি সম্পূর্ণ স্বদেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা হবে এবং ভারতের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী করবে।
পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিনগুলি অত্যন্ত গোপনীয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে পানির নিচে থেকে অপারেশন চালাতে সক্ষম। এগুলি শত্রুপক্ষের সাবমেরিন এবং যুদ্ধজাহাজের উপর নজরদারি চালিয়ে তাদের ধ্বংস করতে সক্ষম। স্বদেশীয়ভাবে নির্মিত এই সাবমেরিনগুলি ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে, কারণ এগুলি দেশের সমুদ্র সীমার নিরাপত্তা বাড়াতে এবং শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভারত ইতোমধ্যেই স্বদেশীয় প্রযুক্তিতে সাবমেরিন নির্মাণে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তবে এই সাবমেরিনগুলি পরমাণু শক্তিচালিত হওয়ায় নির্মাণ প্রক্রিয়া আরও জটিল এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে ভারতের সামরিক শক্তি এবং স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এক বড় সাফল্য হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়াও, পড়ুন : গ্লোবাল পলিকার্বোনেট রেজিন বাজারের আকার 2023 সালে USD 13.39 মিলিয়ন ছিল, এই প্রতিবেদনটি বাজারের বৃদ্ধি, প্রবণতা, সুযোগ এবং পূর্বাভাস 2024-2030 কভার করে
সামরিক আধুনিকীকরণের অংশ:
ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এই দুই চুক্তি সামরিক আধুনিকীকরণের বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে পরমাণু সাবমেরিন নির্মাণ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক ড্রোন সংগ্রহের মাধ্যমে ভারত তার সামরিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এই ড্রোন চুক্তি ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলগত সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে। এর ফলে ভারতীয় সামরিক বাহিনী উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা পাবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
বিশ্বের অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলির মতো ভারতও সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে ভারত তার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বেশ কিছু বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ।
বুধবারের এই চুক্তিগুলির অনুমোদনের মাধ্যমে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুটি বড় ধরনের সংযোজন হতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে অত্যাধুনিক ড্রোন সংগ্রহ এবং স্বদেশীয় প্রযুক্তিতে পরমাণু সাবমেরিন নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মাধ্যমে ভারত তার সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করছে।