**সোনা এই বছর রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে কারণ বাস্তব মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উত্থান এত অস্বাভাবিক কেন তা এখানে উল্লেখ করা হলো।**
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে সোনার দাম একটি নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে। সোনা, যা শতাব্দী ধরে মূল্যবান পদার্থ হিসেবে গণ্য করা হয়, এখন অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো প্রচুর পরিমাণে সোনা সংগ্রহ করছে, যা সোনার দামকে বাড়িয়ে দিয়েছে। ওয়েলস ফার্গোর ইনভেস্টমেন্ট ইনস্টিটিউট জানান যে, আগামী ২০২৫ সালের শেষে সোনার দাম $২,৯০০ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
গোল্ড রাশের পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর এই আনাগোনা একটি বিশেষ অর্থনৈতিক বাস্তবতা প্রতিভাত করছে। বিশ্বব্যাপী টাকার মূল্যহ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি এবং অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগকারীরা সোনা যেমন নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখছেন, তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও নিজেদের ব্যালান্স শিটকে শক্তিশালী করতে সোনার দিকেই ঝুঁকছেন।
সোনার দাম সাধারণত অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় বাড়তে থাকে। যেমন ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের সময় সোনার দাম দ্রুত বাড়ছিল। বর্তমানে, বিশ্বজুড়ে ডলারের দুর্বলতা এবং জ্বালানি সংকটের প্রভাবে মানুষ সোনার দিকে মনোনিবেশ করছে। এর পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ব্যালান্স শিটের ভারসাম্য রক্ষা করতে সোনার বোঝা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছে, যা সামগ্রিক সোনার চাহিদা বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করছে।
তা সত্ত্বেও, সোনার দাম এই ধরণের হারে বাড়ছে কেন? এর একটি কারণ হলো বাস্তব মুনাফার বৃদ্ধি। যখন বিনিয়োগকারীরা মুনাফার উপর চাপ অনুভব করেন, তখন তারা সোনাকে মূলধনের সুরক্ষার জন্য উপায় হিসেবে গ্রহণ করেন। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন বৈশ্বিক প্রতিযোগীতা বাড়ছে এবং মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিচ্ছে, তখন সোনার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে, বিগত কয়েক দশকে সোনা একটি জনপ্রিয় পোর্টফোলিও-diversification উপকরণ হয়ে উঠেছে। অনেক বিনিয়োগকারী এই ধারণা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন যে সোনা উত্তম নিরাপদ আশ্রয়, কারণ এর মূল্য সাধারণত বাজারের অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে স্থিতিশীল থাকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ২০২৩ সালে সোনার দাম যে উচ্চতার দিকে যাচ্ছে, সেটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা হিসেবে দেখা যেতে পারে। একদিকে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা ক্রয়ের স্রোত, অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের সোনায় বিনিয়োগ করার প্রবণতা এটি নির্ধারণ করছে। ফলে, আসন্ন বছরগুলোতে সোনার দামে আরও উল্লম্ফন দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশের বাজারে সোনার মূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও সোনা স্থানীয় বাজারে একটি সামান্য মূল্যবোধ দেয়, তবে এর ব্যয়বহুলতা এবং ক্রয়ের সামর্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
সামগ্রিকভাবে, বর্তমান প্রবণতার মোড় নিতে পারে এবং সোনার দাম আরও অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনাকে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে গ্রহণ করছে। সুতরাং, ভবিষ্যতের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।