ভারত-ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য ও সীমান্তবর্তী সংযোগ নিয়ে আলোচনা, নতুন সমন্বিত চেক-পোস্ট স্থাপনের পরিকল্পনা

ভারত-ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য ও সীমান্তবর্তী সংযোগ নিয়ে আলোচনা, নতুন সমন্বিত চেক-পোস্ট স্থাপনের পরিকল্পনা

Uncategorized

ভারত এবং ভুটান বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে এবং সীমান্তে পণ্য, সেবা ও মানুষের চলাচল সহজ করতে একত্রে কাজ করার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি নতুন সমন্বিত চেক-পোস্ট (আইসিপি) স্থাপন করার পাশাপাশি একাধিক রেলপথ সংযোগ প্রকল্প শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।

ভারতের বাণিজ্য সচিব সুনীল বার্থওয়াল এবং ভুটানের বাণিজ্য সচিব দাশো তাশী ওয়াংমো সহ ভুটানের প্রতিনিধি দলটি থিম্পুতে অনুষ্ঠিত ভারত-ভুটান বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে (সিএসএলএম) অংশ নেয়। বার্থওয়াল দুই দিনের সরকারি সফরে ভুটানে রয়েছেন এবং ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সফর চলবে বলে জানানো হয়েছে।

সংযোগ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন:

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দুটি দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী সংযোগ স্থাপনের জন্য দুটি প্রধান প্রকল্পের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রথমত, ভারত-ভুটান সীমান্তের জয়গাঁও-ফুয়েন্তশোলিং এলাকায় একটি সমন্বিত চেক-পোস্ট (আইসিপি) স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই চেক-পোস্টটি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা এবং যাত্রী চলাচলের ক্ষেত্রে গতি বাড়াবে এবং আরও সহজতর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, কোচরাঝাড়-গেলেপু এবং বানারহাট-সামতসে মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই রেললাইনগুলির মাধ্যমে ভারত-ভুটানের মধ্যে পণ্য পরিবহন আরও দ্রুত এবং সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরেকটি চেক-পোস্ট এবং নতুন আমদানির পথ:

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক আদান-প্রদান বাড়ানোর লক্ষ্যে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানত, ভুটান থেকে ভারতের হাটিসার এবং দাররাঙ্গা ভূমি শুল্ক স্টেশনের (এলসিএস) মাধ্যমে সুপারি আমদানির জন্য অতিরিক্ত রুট চালু করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও, দাররাঙ্গা এলসিএসে ভুটান থেকে ভারতে খাদ্য সামগ্রী আমদানির জন্য একটি নতুন প্রবেশপথ খোলার বিষয়ে আলোচনা হয়।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ভারত সরকার সম্মত হয়েছে যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের পর সমরাং ভূমি শুল্ক স্টেশনকে (এলসিএস) নোটিফাই করা হবে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভুটান থেকে ভারতে আমদানি পদ্ধতি আরও উন্নত হবে।

স্ক্র্যাপ আমদানির পথ:

ভারত ও ভুটানের মধ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ছিল ভুটান থেকে ভারতে স্ক্র্যাপ আমদানির জন্য জয়গাঁও ভূমি শুল্ক স্টেশনকে (এলসিএস) অনুমোদিত হিসেবে নোটিফাই করার ব্যাপারে। এর ফলে ভুটান থেকে ভারতে বিভিন্ন ধরনের ধাতব ও অন্যান্য স্ক্র্যাপ সহজে আমদানি করা যাবে, যা ভারতের পুনর্ব্যবহৃত শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

      এছাড়াও, পড়ুন : গ্লোবাল ওপেনস্ট্যাক ক্লাউড সফ্টওয়্যার বাজার 2024 থেকে 2031 সময়ের জন্য ট্রেন্ডস থেকে কৌশল পর্যন্ত নেভিগেট করা


বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা:

ভারত ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং সীমান্তবর্তী সম্পর্কের উন্নয়ন গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। দুই দেশের মধ্যে সংযোগের উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম সহজতর করতে সমন্বিত চেক-পোস্ট স্থাপন এবং নতুন রেল সংযোগ চালুর মতো প্রকল্পগুলি এই সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে। বিশেষত ভুটানের পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশের সুবিধা বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলে দুই দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছাড়াও ভারত ও ভুটানের মধ্যে কৌশলগত ও নিরাপত্তা বিষয়েও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় রয়েছে। দুই দেশের সরকার প্রায়শই তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে সীমান্তবর্তী অবকাঠামো উন্নয়নের উপর জোর দিয়ে থাকে। গত কয়েক বছরে, ভারত এবং ভুটান একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেছে এবং এই বৈঠকও সেই ধারাবাহিকতার একটি অংশ।

ভারতের বাণিজ্য সচিব সুনীল বার্থওয়াল বলেছেন, “ভুটানের সাথে ভারতের সম্পর্ক সবসময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ এবং পারস্পরিক উন্নতির জন্য উন্মুক্ত। আমরা আশা করি যে, এই বৈঠক থেকে যে সিদ্ধান্তগুলি গৃহীত হয়েছে তা আমাদের দুই দেশের বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।” ভুটানের বাণিজ্য সচিব দাশো তাশী ওয়াংমোও এই বৈঠকে ভারতের সাথে বাণিজ্যিক এবং অবকাঠামোগত সহযোগিতার গুরুত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

ভবিষ্যতের পদক্ষেপ:

যদিও এই বৈঠকে কোনও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ঘোষিত হয়নি, তবে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে যে, আগামী দিনে সীমান্ত সংযোগ এবং বাণিজ্যিক অবকাঠামো আরও উন্নত করার লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।