সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কানাডা ভারতীয় হাই কমিশনারসহ আরও কিছু কূটনীতিবিদকে “ব্যক্তি বিশেষ” হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পর, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MEA) কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কানাডার চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছে। এই পদক্ষেপ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
নিজ্জারের হত্যা ও কানাডার অভিযোগ
২০২৩ সালের ৮ জুন, কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় খলিস্তানি সন্ত্রাসী হরদীপ সিং নিজ্জারকে হত্যা করা হয়। নিজ্জার ছিলেন খলিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান, যিনি ভারত সরকারের চোখে একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। কানাডায় বসবাসকারী নিজ্জার বহু বছর ধরে ভারতবিরোধী প্রচার চালিয়ে আসছিলেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডার পার্লামেন্টে একটি বিবৃতি দিয়ে ভারতের এজেন্টদের নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডে “সম্ভাব্য জড়িত থাকার” অভিযোগ তোলেন।
এই অভিযোগের পর থেকেই ভারত-কানাডা সম্পর্ক চরম উত্তেজনায় পৌঁছেছে। ভারতের সরকার শুরু থেকেই ট্রুডোর এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক বলে দাবি করে আসছে।
কানাডার পদক্ষেপ ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
সর্বশেষ ঘটনায়, কানাডার সরকার নিজ্জারের হত্যার তদন্তে ভারতীয় হাই কমিশনার এবং অন্যান্য কূটনীতিকদের “ব্যক্তি বিশেষ” হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MEA) কূটনৈতিকভাবে কানাডার চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছে এবং একটি কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ভারত এই অযৌক্তিক অভিযোগগুলোকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে এবং এটি কানাডার ট্রুডো সরকারের ভোট ব্যাংকের রাজনীতির একটি অংশ বলে মনে করে।”
এই বক্তব্যে আরও বলা হয়, “গত সেপ্টেম্বর মাসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যে অভিযোগ করেছিলেন, তার পর থেকে কানাডা সরকার আমাদের একাধিক অনুরোধ সত্ত্বেও কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।”
দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন
ভারত-কানাডা সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কারণে তিক্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে খলিস্তানপন্থী গোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপ নিয়ে ভারত বহুবার কানাডার উপর অভিযোগ তুলেছে। ভারত সরকারের মতে, কানাডার মাটিতে বসে কিছু গোষ্ঠী খলিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদকে উসকে দিচ্ছে, যা ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি। অন্যদিকে, কানাডার সরকার সবসময় বলে এসেছে যে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, ট্রুডো যখন নিজ্জারের হত্যায় ভারতের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততার কথা বলেছিলেন, তখন ভারত সরকার এই অভিযোগকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এই ঘটনাটি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ভাঙন আরও ত্বরান্বিত করে।
এছাড়াও, পড়ুন : গ্লোবাল এরিয়া ইমেজ সেন্সর বাজারের আকার 2023 সালে USD 1.70 বিলিয়ন ছিল, এই প্রতিবেদনটি বাজারের বৃদ্ধি, প্রবণতা, সুযোগ এবং 2024-2030 পূর্বাভাস কভার করে
ট্রুডোর ভোট ব্যাংকের রাজনীতি?
ভারত মনে করে, কানাডার সরকার এই ধরনের অভিযোগ এনে মূলত তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করছে। কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও অন্টারিও প্রদেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিখ ভোটার রয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে খলিস্তানপন্থী রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন। ভারত সরকারের মতে, ট্রুডো সরকার এই ভোট ব্যাংক ধরে রাখার জন্য খলিস্তান ইস্যুকে সামনে আনছে এবং ভারতবিরোধী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
কানাডায় ভারতীয় কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে তদন্তের অংশ হিসেবে জড়িত করার পরেই ভারত দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায় এবং একটি কঠোর বিবৃতি প্রদান করে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমরা বহুবার প্রমাণ চেয়েছি, কিন্তু কানাডা সরকার এখনও পর্যন্ত কোনও প্রমাণ দেখাতে সক্ষম হয়নি।”
কূটনৈতিক উত্তেজনার সম্ভাব্য পরিণতি
ভারত ও কানাডার এই কূটনৈতিক সংঘাত ইতিমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে। ২০২৩ সালের শেষদিকে, ভারত ও কানাডার মধ্যে কিছু বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করা হয়েছিল, যা এই উত্তেজনার ফলে আরও তীব্র হয়েছিল। দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। তবে ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা কোনও ভিত্তিহীন অভিযোগ মেনে নেবে না এবং কানাডার এই পদক্ষেপকে তারা যথাযোগ্য জবাব দেবে।
এমইএ-র তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে, “আমরা সব সময় কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কানাডার সরকার যদি ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ধরে চলতে থাকে, তাহলে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।”