রতন টাটার শেষযাত্রা: এক শিল্প-প্রতিভা এবং সমাজসেবকের বিদায়ে ভারত শোকার্ত

রতন টাটার শেষযাত্রা: এক শিল্প-প্রতিভা এবং সমাজসেবকের বিদায়ে ভারত শোকার্ত

Uncategorized

ভারতের প্রখ্যাত শিল্পপতি ও সমাজসেবী রতন টাটার জীবনাবসান ঘটেছে। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যের অবনতির সাথে লড়াইয়ের পর, আজ সকালে মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। সূত্রের খবর অনুযায়ী, শারীরিক দুর্বলতা এবং বয়সজনিত বিভিন্ন জটিলতায় তিনি ভুগছিলেন। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পরও, তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে এবং অবশেষে তিনি প্রয়াণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের শিল্প ও বাণিজ্য মহলও গভীর শোকের মধ্যে রয়েছে।

রতন টাটার জন্ম ১৯৩৭ সালে, বোম্বাই (বর্তমান মুম্বাই) শহরে। টাটা পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি ছোটবেলা থেকেই দায়িত্বশীলতার পাঠ নিতে শুরু করেন। রতন টাটা ছিলেন একাধিক ক্ষেত্রের একজন অন্যতম স্রষ্টা, যিনি তাঁর নেতৃত্বে টাটা গোষ্ঠীকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। শিক্ষা এবং শৈশব থেকেই একজন সমাজ সচেতন মানুষ হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন, যা পরবর্তীতে তাঁর শিল্প-ব্যবসায়িক কৃতিত্বেও প্রতিফলিত হয়।

সমাজসেবায় রতন টাটার অবদান

রতন টাটা শুধু একজন সফল শিল্পপতি নন, একজন অনন্য সমাজসেবীও ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ব্যবসা শুধু লাভের জন্য নয়, সমাজের কল্যাণের জন্যও কাজ করতে হবে। তাঁর নেতৃত্বে টাটা গোষ্ঠী স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং পরিবেশ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। রতন টাটা তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে দেশের দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করেছেন। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে ঘটে যাওয়া ২৬/১১ হামলার পর, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সাহায্যার্থে তিনি বিপুল অর্থ বরাদ্দ করেন।

শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ অবদান স্মরণীয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব, এবং এই লক্ষ্যে তিনি একাধিক শিক্ষা প্রকল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। এছাড়া, টাটা গোষ্ঠীর অধীনে ‘টাটা ট্রাস্ট’ও সমাজকল্যাণমূলক কাজ করে থাকে, যা স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ, শিক্ষা ও খাদ্য সুরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দেশের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালে রতন টাটা ‘ন্যাশনাল সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারে ভূষিত হন, যা তাঁর সমাজসেবার প্রভাবকেই ফুটিয়ে তোলে।

এছাড়াও, পড়ুন : 2023 সালে গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্স-রে ফিল্ম মার্কেটের আকার ছিল USD 232.00 মিলিয়ন, এই প্রতিবেদনটি বাজারের বৃদ্ধি, প্রবণতা, সুযোগ এবং পূর্বাভাস 2024-2030 কভার করে

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে টাটা গোষ্ঠীর ভূমিকা

রতন টাটার অধীনে টাটা গোষ্ঠী শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের শিল্পক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি টাটা গোষ্ঠীকে একটি আঞ্চলিক শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে এক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক গোষ্ঠীতে পরিণত করেছেন। টাটা গোষ্ঠীর অধীনে বিভিন্ন খাত যেমন অটোমোবাইল, লোহা ও ইস্পাত, টেলিকমিউনিকেশন, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, এবং রসায়নশাস্ত্রের বিভিন্ন শাখায় ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি ২০০৮ সালে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার এবং কোরাস স্টিল কেনার মাধ্যমে টাটা গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক বাজারে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। বর্তমানে, টাটা মোটরস, টিসিএস (টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস), এবং টাটা স্টিলসহ টাটা গোষ্ঠীর বিভিন্ন কোম্পানি বিশ্বের প্রায় ১০০টিরও বেশি দেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে। টিসিএস-এর মাধ্যমে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে বৈশ্বিক মানচিত্রে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অসামান্য। ২০১২ সালে, টিসিএস বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শক কোম্পানিতে পরিণত হয়।

তাঁর অবদান শুধুমাত্র ব্যবসায়িক নয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বব্যাপী টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মসংস্থান পেয়েছেন।

একজন সমাজের প্রহরী হিসেবে রতন টাটা

রতন টাটা একজন মানুষ ছিলেন যিনি সব সময় মানুষ এবং তাদের কল্যাণকে সামনে রেখেছেন। তিনি বারবার বলে এসেছেন, “ব্যবসা করার অর্থ শুধু মুনাফা অর্জন নয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানোও জরুরি।” তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এই আদর্শ মেনে চলেছেন। তিনি শুধু একজন শিল্পপতি ছিলেন না, ছিলেন একজন মানবপ্রেমী মানুষ। তাঁর প্রয়াণে শুধু ভারতের শিল্পমহল নয়, গোটা বিশ্ব এক মহান প্রহরীকে হারাল।