জম্মু ও কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্সের (এনসি) নেতা ওমর আবদুল্লাহ পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) সাথে সম্ভাব্য জোটের জল্পনাকে ‘অপূর্ব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। রবিবার এনসি সভাপতি ফারুক আবদুল্লাহ জোট গঠন প্রসঙ্গে যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে ওমর আবদুল্লাহ জানিয়েছেন যে এমন আলোচনা এখনও প্রাসঙ্গিক নয় এবং বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য আরও সময় প্রয়োজন।
ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “তারা এখনও সমর্থন বাড়ায়নি, তারা কোনও সমর্থন দেওয়ার প্রস্তাবও দেয়নি, এবং আমরা এখনও জানি না ভোটাররা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই আমি সত্যিই চাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সমস্ত অপূর্ণ জল্পনার উপর একটি সীমা টানা হোক।” তিনি এক্স (পূর্বে টুইটার) এ পোস্টে এই মন্তব্য করেন।
এদিকে ফারুক আবদুল্লাহ সোমবার বলেছিলেন, তার দল প্রয়োজনে পিডিপি সমর্থন নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “নির্বাচনে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারি, কিন্তু সরকার গঠনে পিডিপির সমর্থন নিতে আমার কোনও আপত্তি নেই এবং আমি নিশ্চিত কংগ্রেসেরও কোনও আপত্তি থাকবে না।”
জোটের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা
কাশ্মীর উপত্যকায় জম্মু ও কাশ্মীরের সরকার গঠনের প্রশ্নে ফারুক আবদুল্লাহর এই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। এনসি এবং পিডিপি-কে দীর্ঘদিন ধরেই দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হলেও, প্রয়োজনে সরকার গঠনে দুটি দলের জোটের সম্ভাবনা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
অপেক্ষা ভোটারদের রায়ের জন্য
ওমর আবদুল্লাহর স্পষ্ট মন্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এনসি এখনই কোনও সিদ্ধান্তে আসতে চায় না। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দলগুলি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। “আমি চাই সবাই ধৈর্য ধরুক এবং অপেক্ষা করুক। ভোটাররা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আগে ফলাফল আসুক, তারপরই আমরা আলোচনা করতে পারি,” ওমর বলেছেন।
অবস্থার গুরুত্ব
জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচন সবসময়ই ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে, গত কয়েক বছরের মধ্যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর সরকার গঠনের প্রশ্নে রাজনীতিতে গভীর প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক মহল উত্তেজিত এবং এনসি-পিডিপি জোটের সম্ভাবনা নতুন আলোচনার সূচনা করেছে।
এছাড়াও, পড়ুন : Nylon 66 (Polyhexamethylene Adiptimide) বাজারের বৃদ্ধি, বাজার বিভাজন এবং আঞ্চলিক বিশ্লেষণ
আবদুল রশিদকে ওমরের আক্রমণ
একই সাথে, ওমর আবদুল্লাহ লোকসভা সদস্য শেখ আবদুল রশিদের প্রস্তাবকেও তীব্র সমালোচনা করেছেন। আবদুল রশিদ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার আগে সরকার গঠন স্থগিত রাখার প্রস্তাব দেন। ওমর আবদুল্লাহ এর বিপরীতে মন্তব্য করে বলেছেন, “এটি শুধুমাত্র বিজেপির সুবিধা করবে। বিজেপি চাইবে কেন্দ্রশাসিত শাসনের সময়কাল আরও দীর্ঘায়িত করতে। এটি আমাদের জন্য কোনভাবেই ভাল হবে না।” তিনি এই ধরনের প্রস্তাবকে কাশ্মীরের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে বলেও মন্তব্য করেছেন।
ওমর আবদুল্লাহ মনে করেন, সরকার গঠনের প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা হলে বিজেপির ক্ষমতা আরও সংহত হতে পারে এবং কাশ্মীরের জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে। তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি করতে পারি না, যেখানে বিজেপি কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে। আমাদের রাজ্যকে তার যথাযথ অবস্থানে ফিরিয়ে আনা দরকার এবং আমরা কাশ্মীরের জনগণের আশা পূরণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক দৃশ্যপট
জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি, যেখানে রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত, সেখানে সরকার গঠনের প্রশ্ন নিয়ে নতুন জল্পনা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসি এবং পিডিপি যদি একটি কৌশলগত জোট গঠন করে, তাহলে তা জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে এনসি এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি এবং ওমর আবদুল্লাহ স্পষ্ট করেছেন যে, ফলাফল প্রকাশের আগে দল কোনও ধরনের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করবে না।
সম্ভাব্য ফলাফল এবং পরবর্তী পদক্ষেপ
এখন সকলের দৃষ্টি জম্মু ও কাশ্মীরের ভোটের ফলাফলের দিকে। রাজনৈতিক মহল, বিশেষ করে এনসি এবং পিডিপি, নির্বাচনের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করছে এবং ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে। তবে যে কোনও ধরনের সরকার গঠনের আগে, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনের আশা করা হচ্ছে।